ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশের সেরা দুটি জয়

নাজমুল হোসেন শান্তর অফিশিয়াল ফেসবুক পাতার কাভার ছবিতে এখনো শোভা পাচ্ছে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক সেই জয়ের পর ড্রেসিং রুমে সবার উল্লাসের ছবি। তবে তার প্রোফাইলে সিলেটের এ জয়কে খুঁজে পেতেও সমস্যা হয়নি একটুও। জয়ের পরপরই ড্রেসিং রুমের ভেতর অনেকটা একইভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবার উল্লাসের ছবি তিনি পোস্ট করে তিনি লিখেন, ‘এটি মনে রাখা হবে দীর্ঘদিন।’ এ দুটি ছবিকে এক সুতোয় গাঁথা যায় আসলে খুব সহজেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ দুটি জয়ও দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো। সম্ভবত বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সেরা দুটি জয়।

কোনটি বেশি স্পেশাল, সেই প্রশ্নও করা হলো সিলেট টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে। শান্ত বললেন, তার কাছে প্রতিটি টেস্ট জয়ই বিশেষ কিছু। এ দুটি টেস্টের মধ্যে কোনো একটিকে তিনি এগিয়ে রাখতে চান না। তার জায়গা থেকে এরকম কূটনৈতিক উত্তরটা খুব অপ্রত্যাশিত নয়। তবে জয় যেটিই এগিয়ে থাকুক, একটি ব্যাপার নিশ্চিত, সিলেটের এ জয়ে তিনি নিজে অনেকটা এগিয়ে গেলেন। মানে, এগিয়ে রইলেন অধিনায়ক শান্ত। টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পরবর্তী নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার অদৃশ্য কোনো লড়াই যদি থাকে বা যত আলোচনা, সব কিছুতেই সম্ভাব্য অন্যদের চেয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করে ফেললেন তিনি অসাধারণ এ জয়ে। এমনিতে এ টেস্ট বা সিরিজ থেকে অধিনায়ক হিসেবে তার হারানোর কিছু ছিল না। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তিনি, তরুণ একজন। দলের বা দেশের সাম্প্রতিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। এ অবস্থায় যদি দল ভালো না করত বা অধিনায়ক হিসেবে তিনি ছাপ রাখতে না পারতেন, তাহলে তাকে দায় দেওয়া বা কাঠগড়ায় তোলার মতো কোনো ব্যাপার হয়তো হতো না। তবে হারানোর না থাকলেও তার পাওয়ার ছিল অনেক কিছু। তার জন্য এটা এরকম ছিল নিজের নেতৃত্বগুণ মেলে ধরার মঞ্চ। পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে তার পোশাকি মহড়াও। সেই মহড়াতেও তিনি এতটা অসাধারণ পারফর্ম করলেন যে, এখন মূল দায়িত্ব পাওয়াটা কেবলই মনে হচ্ছে সময়ের ব্যাপার। যতটুকু প্রাপ্তির ছিল, পেলেন তিনি সবটুকুই।

টস ভাগ্যকে পাশে পেয়ে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার পথচলা শুরু। তবে প্রথম দিনটি ব্যাট হাতে তার ভালো কাটেনি। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ফুল টস বলে এক শটে আউট হয়ে ফেরেন ৩৬ রানে। অধিনায়কের কাছ থেকে প্রত্যাশা থাকে দায়িত্বশীল ব্যাটিং, শান্তর আউটে ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ছাপ। তবে মুগ্ধতা ছড়ানোর শুরু দ্বিতীয় দিন থেকে, যখন তার নেতৃত্বের অন-ফিল্ড পরীক্ষার শুরু। বোলিং পরিবর্তনগুলোয় তাকে দেখা গেল নিখুঁত। দ্বিতীয় দিনে তার চারটি বোলিং পরিবর্তনে প্রথম ওভারেই ধরা দেয় উইকেট। পার্ট টাইম স্পিনার মুমিনুল হককেও যেভাবে তিনি ব্যবহার করেছেন, তা ছিল দেখার মতো। দ্বিতীয় দিনে মুমিনুলের প্রথম ওভারেই গ্লেন ফিলিপসের বিদায়ে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জুটি ভেঙেছে। পরদিন কাইল জেমিসন ও টিম সাউদির জুটি এক ঘণ্টা কাটিয়ে দেন নির্বিঘ্নে। পানি পানের বিরতির পরই শান্ত আক্রমণে আনেন মুমিনুলকে। এবার তার প্রথম ওভারেই আসে দুটি উইকেট! মুমিনুল দিনের খেলা শেষে জানান, বাইরে থেকে পাওয়া নির্দেশনায় নয়, শান্তর তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তেই পরিবর্তনগুলো হয়েছে।

ফিল্ডিং সাজানোতেও শান্ত বেশির ভাগ সময় ছিলেন আগ্রাসী। দেখা যায় কিছু নতুনত্বও। দুই ইনিংসেই উদ্ভাবনী বেশ কিছু দিক চোখে পড়েছে তার মাঠ সাজানোয়। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে নাঈম হাসানের বলে কেন উইলিয়ামসন যেখানে ক্যাচ দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলামকে এবং শেষ দিকে নাঈমের বলেই যেখানে তাইজুলের হাতে ধরা পড়লেন ড্যারিল মিচেল, দুটিই একটু অপ্রথাগত পজিশন। যেটির মানে, পরিষ্কার পরিকল্পনা শান্তর ছিল। সব মিলিয়ে মাঠে দারুণ তৎপর ও সক্রিয় ছিলেন তিনি। দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে, ঘটনা ঘটার অপেক্ষা না করে তিনি চেষ্টা করেছেন ঘটিয়ে দেওয়ার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, দলকে মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ ফেরানোর আবহ গড়ে তোলা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close