ফারুক হোসেন সজীব

  ০৮ জুন, ২০২৪

পাখি হতে চাই

নেহাল সকালে কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে পারে না। ঘুম থেকে উঠলেই নাকি ওর চোখ জ্বালাপোড়া করে। মাথা ঘুরায়। ঝিম ধরে থাকে! আসলে অভ্যেস নেই বলে নেহালের এমনটা হয়। এজন্য নেহাল সকালের নির্মল বাতাস। পাখিদের কিচিরমিচির ডাক। প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য, এমন অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়। নেহাল তার প্রতিদিনের কাজগুলোও ঠিকঠাকমতো করতে পারে না। অনেক বেলা অবধি ঘুম থেকে ওঠার কারণে শরীরও ভঙ্গুর-অসুস্থ! কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না!

কিন্তু বাগানে নেহাল রোজই সকালে পাখির ডাক শুনতে পায়। এক দিন নেহাল ভাবল, আচ্ছা পাখি হয়ে ওরা রোজই কি সুন্দর নিয়ম করে জেগে ওঠে। আবার কী সুন্দর কিচিরমিচির ডাকে। তারপর খাদ্যের খোঁজে বাসা ছেড়ে কোথায় চলে যায়। ফিরেও আসে সেই সন্ধ্যা নাগাদ। বাসায় ফিরে ছানাগুলোর সঙ্গে কী সুন্দর কিচিরমিচির কথা কয়! তারপর আবার নিয়ম মেনে ঘুমায়।

অথচ, তার নিজের কোনো নিয়ম নেই। কখন ঘুমাচ্ছে। কখন খাচ্ছে। কোনো ঠিকঠিকানাই নেই! এটা কোনো কথা হলো? আচ্ছা যদি পাখিদের নিয়মগুলো সে পালন করে, তাহলে কেমন হয়?

যা ভাবা সেই কাজ। নেহাল আম্মুকে বলল, আমাকে একটা বড়সড় দেয়ালঘড়ি কিনে দাও। আম্মু তো নেহালের কথা শুনে অবাক! বললেন, তোমার স্মার্টফোন থাকতে দেয়ালঘড়ির কী দরকার, শুনি? নেহাল তার স্মার্টফোনটি আম্মুকে দিয়ে বলল, এটা আমার দরকার নেই। তুমি আমাকে একটা দেয়ালঘড়ি কিনে দাও। আমি পাখি হব।

আম্মু বললেন, তুমি পাখি হবে? সেই ছড়াটির মতো?

আমি হবো সকাল বেলার পাখি...।

নেহাল বলল, ঠিক ধরেছো। কি দিবা না আমাকে একটা দেয়ালঘড়ি কিনে? আম্মু বললেন, দিতে পারি, কিন্তু ঘড়িটার সৎ ব্যবহার করতে হবে। নেহাল বলল, সেটা তুমি দেখতেই পারবে। পরের দিনই আম্মু নেহালকে একটা সুন্দর বড়সড়, লাল দেয়ালঘড়ি কিনে দিলেন। নেহাল আর দেরি করল না। ছুটির দিন ছিল বলে সে সকাল থেকেই পাখিদের ওপর নজর রাখল। দেখল, পাখিগুলো ঠিক ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে জাগে। নেহাল নিজের রুটিনে লিখল, ঘুম থেকে উঠব। ফজর আজানের সময়। তারপর! তারপর কী? নেহাল তারপর পাখিদের মতিগতি লক্ষ করে বুঝল ওরাও হয়তো প্রার্থনা করছে। তাই নেহালও প্রার্থনা করল। তারপর চারদিকটা আস্তে আস্তে একটু ফরসা হতেই পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দ শোনা গেল। তার মানে পাখিগুলো সবাই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে খাদ্যের খোঁজে। নেহালেরও স্কুলে যাওয়ার সময় হয়েছে। স্কুল ছুটি হবে বিকেলে। নেহাল স্কুল ছুটির পর বাসায় এলো। দেখল, পাখিগুলো আস্তে আস্তে বাসায় ফিরে আসছে। কোনো কোনো পাখি ফিরল সেই সন্ধ্যা নাগাদ। নেহাল বুঝতে পারল পাখিগুলো অনেক বেশি পরিশ্রমী। নেহালও নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সন্ধ্যা হলে নেহালের আব্বু-আম্মুও অফিস শেষে বাসায় এলেন। ঠিক যেন পাখিগুলোর মতো। আব্বু-আম্মু বাসায় এসেই পাখির মতো নেহালের সঙ্গে কথা বলতে মানে কিচিরমিচির করতে লাগলেন। নেহালও ভীষণ খুশি হলো। নেহালের এত উচ্ছ্বাস দেখে আব্বু-আম্মুও ভীষণ খুশি হলেন। আম্মু, আড়চোখে আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললেন, নেহালের এই পরিবর্তনের কারণ জানো? কারণটা হলো- নেহাল পাখি হতে চায়। আব্বু প্রথমে তেমন কিছুই বুঝলেন না। পরে আম্মু সব খুলে বললেন। শুনে আব্বুও নেহালকে অভিনন্দন জানালেন। নেহাল খুশি হয়ে নিজের পড়ার রুমে চলে গেল। জানালার পাশে দাঁড়াল। দেখল, পাখিগুলো তখনো আস্তে আস্তে কিচিরমিচির করছে। তার মানে পাখিগুলো বাসায় এসে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমায় না।

তাহলে কী করে? নিশ্চয় ছানাদের কিছু না কিছু শেখায়। তার মানে ওরা বাবা-মায়ের কাছে পড়াশোনাও করে। নেহালও পড়তে বসল। প্রায় ঘণ্টা দু-এক পড়ল। ইতিমধ্যে পাখিগুলোর কিচিরমিচিরও থেমে গেছে। চারদিকটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। নেহালও আর দেরি করল না। পাখিদের মতো তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়ল। আর মনে মনে বলল,

আর্লি টু বেড অ্যান্ড

আর্লি টু রাইজ...!

এভাবে চলতে থাকল প্রায় সপ্তাহখানেক। এর ভেতরেই নেহাল এক আশ্চর্য পরিবর্তন লক্ষ্য করল নিজের ভেতরে। সে প্রচুর পরিশ্রমী আর উদ্যোমী হয়ে উঠেছে। শরীরেও প্রচুর এনার্জি পাচ্ছে। মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগেই আছে। নেহাল হঠাৎ বেলকুনির গ্রিল ধরে দাঁড়াল। সে পাখিদের উদ্দেশ্য করে বলল, তোমাদের অনেক-অনেক ধন্যবাদ বন্ধুরা। তোমাদের জন্যই আমি আমার নতুন জীবন পেয়েছি। তোমরা কি জানো বড় হয়ে আমি কি হতে চাই? পাখিগুলো নিশ্চুপ ছিল- নিশ্চুপ হয়েই রইল। কোনো শব্দ করল না।

নেহাল বলল, আমি বড় হয়ে- পাখি হতে চাই! আর পাখি হওয়া মানে, তোমরা কি জানো? পাখি হওয়া মানে- আমি পাইলট হতে চাই! হঠাৎ পাখিগুলোর কী যে হলো, এত বেশি কিচিরমিচির শুরু করে দিল যে, কিচিরমিচির-কিচিরমিচির শব্দ যেন থামছেই না! যেন সব পাখি মিলে নেহালকে অভিনন্দন জানাচ্ছে- শুভেচ্ছা জানাচ্ছে! নেহালও পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দ শুনে কেমন অভিভূত হয়ে গেল!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close