মুহিব্বুল্লাহ কাফি
এংটি ইঁদুরের সাত বউ
তোমরা তো পিপীলিকার গল্প শুনেছ। ঝড়বৃষ্টি দিন আসার আগে পিঁপড়ারা খুব কষ্ট করে খাবার জমা করে রাখে। যাতে ঝড়বৃষ্টি বা পানি এলে তারা সেই জমাকৃত খবার খেতে পারে। কিন্তু আজ তোমাদের শোনাব ইঁদুরের সাতটা বিয়ে করার গল্প।
বৈশাখ এসে গেল। সবুজ ধানের শিষগুলোতে সোনালি রঙের বাতাস লেগেছে। পেকে গেছে কৃষকের ধান। ছড়া ভর্তি ধানের শিষ। হাসি ফুটেছে কৃষক-কৃষাণীর বাঁকা ঠোঁটে। পাকা ধান এবার ঘরের ওঠানোর সময় হয়েছে।
আর এই মৌসুমেই বিয়ে লেগেছে ইঁদুরদের। তাদের বাড়িঘর তো বাতাসে দোল খাওয়া পেকে থাকা সোনালি ধানের খেতেই। কৃষকের মতো ইঁদুররাও ধান পাকার আশায় থাকে। ইঁদুররা চেয়ে থাকে কখন কৃষকরা তাদের ধান কাটবে। কারণ, কৃষকরা পাকা ধান কাটার সময় অনেক ধানখেতে পড়ে থাকে। তখন ইঁদুররা সেই ধান তাদের গর্তে পুরে। ইঁদুরদের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা। কার কয়টা গর্ত ধানে ভরপুর।
এংটি ইঁদুর যে খেতে থাকে সে খেতের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু এংটি ইঁদুরই বিয়ের বাকি। তাই গত বছর সবচেয়ে কম ধান ছিল এংটি ইঁদুরের গর্তে। সে একা আর কত ধান কুড়োবে। বলো? অন্যদের বউ আছে এংটি ইঁদুরের তো তা নেই। তাই সে এবার ধান কাটার আগেই বিয়ে করবে। বিয়ে একটি, দুটি নয়। এংটি ইঁদুর এবার বিয়ে করবে সাত, সাতটি।
আরে হ্যাঁ সাতটি বিয়ে করবে এংটি। কারণ, আর কদিন পরই কৃষকরা ধান কাটবে। ধান নিচে পড়বে। সে ধান এবার এংটি ইঁদুরের ঘরেই বেশি থাকা চাই। তাই সে সাতটি বিয়ে করবে। যাতে করে সাত বউ ধান জমা করতে পারে। সাত বউয়ের সাতটি গর্ত ভর্তি ধান হবে। এ বৈশাখে এংটি ইঁদুরের ঘরেই সবচেয়ে বেশি ধান উঠবে।
এই তো কিছুদিন হলো এংটি ইঁদুরে বিয়ে করেছে। বরযাত্রী হিসেবে ছিল ইঁদুর, ভ্রমর, প্রজাপতি, ঘাসফড়িং ও মৌমাছি। এংটি ইঁদুর বিয়ের টুপি মাথায় হাতে রোমাল। পরনে শেরওয়ানি। হাসছিল মুচকি মুচকি। ঠাঁ ঠাঁ রোদের কারণে জামাই এংটি ইঁদুরের মাথায় ছাতা ধরেছিল বন্ধু ঘাসফড়িং। প্রজাপতি উড়ে উড়ে গান গায়ছিল..
এংটি ইঁদুরের বিয়ে
মাথায় টুপি দিয়ে
মৌমাছি করে মৌ মৌ
এংটির হবে সাত বউ।
ভ্রমর, প্রজাপতি, ঘাসফড়িং, মৌমাছিরা এংটি ইঁদুরের বউ এনে যে যার বাসায় ফিরে গেল। এংটি ইঁদুর তার সাত বউ নিয়ে ঢুকেছে ঘরে। এংটি ইঁদুর বিয়ের আগের তার সাত বউয়ের জন্য খুঁড়ে রেখেছিল সাতটি গর্ত। একেক বউকে একেক গর্ত বুঝিয়ে দিল এংটি।
এখন কৃষকরা ধান কাটা শুরু করে দিয়েছে। ধান কাটছে। একেক খেতে দশ-বারোজন এক সঙ্গে ধান কাটতে লেগে গেছে। ধান কেটে মুড়ি বেঁধে বেঁধে রাখছে ওখানেই। ধান কাটা শেষ হলে সেই ধানের মুড়িগুলো যার যার উঠোনে নিয়ে ঢিবি দিচ্ছে। কৃষকরা সব ধান নেওয়ার পর শুরু হয় ইঁদুরদের প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা নামে তখন। খেতের আনাচে-কানাচে, আলের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে ধান। সেই ধান সংগ্রহ করার জন্য বের হয় ইঁদুরের দল। হই-হুল্লোড় চেঁচি চেঁচি আওয়াজ ওঠে ওই খেতে। এংটি ইঁদুরও বের হলো গর্ত থেকে। সঙ্গে সাত নববধূ। বিয়ের মেহেদিও শুকায়নি এখনো। নেমে পড়েছে ধান অভিযানে। সাত বউ দুহাতে ও মুখে করে ধান নিয়ে দেয় ছুট। গর্তে সেই ধান রেখে ত্বরিতগতি ফের ছুটে ধান আনতে। সব ইঁদুরের বউয়ের থেকে এংটি ইঁদুরের নববধূরা জোয়ান। তাই শরীরে বল-ও বেশি। দৌড়াতেও পারে সবার আগে। অন্য ইঁদুররা একবার ধান গর্তে নিতে নিতে এংটি ইঁদুরের বউয়েরা দুবার নিয়ে নেয়। সব ইঁদুর হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। কি সাংঘাতিক বউ রে বাবা!
এভাবে যে খেতের ধান কাটা শেষ হয় ওই খেতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে এংটি ইঁদুরের সাত নববধূ। অন্য খেতের অন্য ইঁদুরাও পেরে ওঠে না এংটি ইঁদুরের সাত বউয়ের সঙ্গে। ধান সংগ্রহে সবার থেকে এগিয়ে এংটি ইঁদুরের সাত বউ।
শেষ হলো ধান। আর ধান নেই কোনো খেতে। এবার দেখার পালা কার গর্তে কত ধান উঠেছে। কেউ সংগ্রহ করতে পেরেছে অর্ধেক গর্ত। কারো বা গর্তের এক কোণে পড়ে থাকে ধান। কিন্তু এংটি ইঁদুরের সাত বউয়ের সাত গর্ত ভর্তি ধান। সবাই বাহবা দিচ্ছে এংটি ইঁদুরকে। কেউ বলছে, এংটি হে, কাজের কাজ তুই-ই করেছিস রে বেটা। কেউ বলে, আগামীতে আমাদেরও বিয়ে করতে হবে এংটির মতো। আবার বলে কেউ, এংটির বউয়েরা তো বউ নয় যেন যুদ্ধের দ্রুতগামী ঘোড়া। হাতে মুখে ধান নিয়ে দেয় দৌড়, যাকে বলে ভোঁদৌড়। পলক ফেলার আগেই ধান গর্তে রেখে ফের চলে আসে! সেই বুদ্ধিমতীরা এংটির নববধূ। চোতুর-ও বটে। বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এংটি ইঁদুরের সাত নববধূ।
সবার বাহবা পেয়ে এংটি ইঁদুরের বুকটা গর্বে ভরে যায়।
"