গাজী আরিফ মান্নান

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বইয়ের টানে আকুল প্রাণে

টিটু বই পড়তে খুব পছন্দ করে, নতুন বই হাতের কাছে পেলে সে এক বৈঠক শেষ করে ফেলতে চায়, এভাবে বইয়ের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক। মা-বাবার সঙ্গে বইমেলায় গিয়ে নতুন নতুন বই সে প্রতি বছর সংগ্রহ করে। প্রতিবারের মতো এবারও নতুন নতুন বইয়ের টানে তার প্রাণটি আকুল হয়ে আছে। এর মধ্যে টিটু বইমেলায় যাওয়ার জন্য বাবা-মাকে চাপাচাপি করতে থাকে। কিন্তু মা-বাবা দুজনই কর্মব্যস্ত থাকায় টিটুকে নিয়ে এবার বইমেলায় যাওয়া হয়ে উঠছে না। টিটু নাছোড়বান্দা সে বইমেলায় যাবেই যাবে, কিন্তু সে কীভাবে যাবে সে তো শহরে কখনো একা একা যায়নি। সে মনে আক্ষেপ নিয়ে স্কুলে গেল, কিন্তু স্কুলে তার মন খারাপ দেখে সবাই কারণ জানতে চাইল, তখন সে স্কুলের বন্ধুদের সব কথা খুলে বলল। কথা শুনে তারাও যেতে আগ্রহ প্রকাশ করল, কিন্তু তারা মাত্র ক্লাস সেভেনে উঠেছে, এত কম বয়স, পথঘাটও ভালো করে খুব একটা চিনে না, কীভাবে যাবে? তখন টিটুর কয়েকজন বন্ধু শ্রেণিশিক্ষক মাহমুদ স্যারকে বিষয়টি জানাল। স্যার বলল, ঠিক আছে তোমরা ভালো কথা বলেছো, আমি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে তোমাদের আজই জানাব। টিফিন পিরিয়ডে স্যার সবাইকে ডেকে নিয়ে বলল, আগামী দিন টিফিন পিরিয়ড সময়ে তোমাদের নিয়ে বইমেলায় যাব। শিক্ষার্থীরা সমস্বরে হুররে বলে আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠল। তারপর কী করতে হবে তাও বলে দিলেন, এটাও বললেন তোমাদের মা-বাবাকে বিষয়টি জানাবে এবং আমাকে ফোন করতে বলবে। সবার মা-বাবাকে আমিই বুঝিয়ে বলব।

সবাই বাড়িতে গিয়ে মাহমুদ স্যারের সঙ্গে মা-বাবাকে কথা বলিয়ে দেয়, স্যার সহজেই প্রত্যেকের মা-বাবাকে রাজি করালেন। পরদিন সবাই প্রস্তুতি নিয়ে হাজির বইমেলায় যাওয়ার জন্য, শুধু হোসাইন এখনো আসতে পারেনি। সবাই তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল, এর মধ্যে সেও এসে হাজির। সবাই জিজ্ঞেস করল, কিরে দেরি করলি কেন? তখন হোসাইন বলল, বাবা বাড়িতে ছিল না, তাই আসতে এত দেরি হলো। এবার মাহমুদ স্যার সবাইকে ডেকে বলল, তোমরা বইমেলায় গিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাঘুরি করবে না, আমার সঙ্গে থাকবে। দল বেঁধে স্টলে গিয়ে বই পছন্দ করবে, পছন্দ হলে বলবে আমি তোমাদের ভালো বই নির্বাচন ও কিনতে সহযোগিতা করব। সবাই মাহমুদ স্যারের সঙ্গে হাঁটা দিল গাড়িতে ওঠার জন্য। গাড়িতে উঠে টিটুরা হইচই করতে করতে মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছে গেল।

সবাই দল বেঁধে মাহমুদ স্যারের পিছু পিছু হাঁটছে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে মাহমুদ স্যার শিশু-কিশোর উপযোগী স্টলগুলোর সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন, একপর্যায়ে থেমে গেলেন, সবার উদ্দেশে বললেন, এখানে অনেকগুলো স্টল দেখতে পারছ, এই স্টলগুলো থেকে তোমাদের পছন্দের বইগুলো পেয়ে যাবে। টিটুরা স্টলের কাছে গিয়ে একটার পর একটা বই দেখতে লাগল এবং পছন্দ করে মাহমুদ স্যারের সহায়তায় কিনতে লাগল, যেহেতু তারা ছাত্র তাই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোও অনেক বড় ডিসকাউন্টে বইগুলো ছাত্রদের কাছে বিক্রি করছে, এতে সহজেই সবাই নিজের পছন্দের বইটি কিনে নিতে পারছে। একে একে সবাই দু-তিনটি বই করে কিনে নিল, তাদের পছন্দের বইগুলোর মধ্যে আছে ছড়া, গল্প, জোকস, বিজ্ঞানবিষয়ক ইত্যাদি। এতগুলা বই কিনতে পেরে সবাই মহাখুশি।

বই কেনা শেষে মাহমুদ স্যার সবাইকে একটি দোকানে নিয়ে গেলেন কিছু খাওয়ানোর জন্য। ছাত্রদের সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন কী খাবে? কেউ কিছু বলছে না দেখে স্যার সবার জন্য লাচ্ছি অর্ডার করলেন। লাচ্ছি আসতে আসতে মাহমুদ স্যার সবাইকে বললেন, তোমরা যে বইগুলো কিনেছো তা নিজে পড়ে শেষ করে অন্যদেরও পড়তে উৎসাহিত করবে। এভাবে একে অন্যের বই ধার নিয়ে পড়তে পড়তে দেখবে সবগুলো বই কয়েক মাসের মধ্যে পড়া শেষ হয়ে গেছে। এ বইগুলো আস্তে-ধীরে সময় নিয়ে পড়লে ৫-৬ মাস লেগে যাবে। এরপর বইগুলো অন্য শ্রেণির ছাত্রদের পড়তে উৎসাহিত করবে, এতে করে সবার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং ধীরে ধীরে ভালো পাঠক সৃষ্টি হবে। আর যারা বই পড়ে তারা খারাপ কাজে নিজের সময় ব্যয় করতে পারে না, এভাবেই ভালো মানুষ তৈরি হবে। এর মধ্যে লাচ্ছি এসে হাজির, সবাই বইগুলো পাশে রেখে খুব মজা করে খেতে লাগল। খাওয়া শেষে মাহমুদ স্যার বিল মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close