মিলাদ হোসেন সুজন

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ইঁদুরের শিক্ষালাভ

স্কুলের পেছনে বাস করত একটি ইঁদুর। তার সঙ্গে বাস করত তার দুই ভাই মিল্টু ও পিল্টু। আগে তারা একটি মুদি দোকানে বাস করত। সঙ্গে তাদের মা-বাবাও ছিল। খুব আরামণ্ডআয়েশে তাদের দিন কাটত সেখানে। ইঁদুরের মা এবং বাবা মুদি দোকান থেকে চুরি করে অনেক ভালো খাবার নিয়ে যেত তাদের জন্য। আর সে খাবারগুলো খেয়ে তারা বেশ তৃপ্তি পেত। তবে হঠাৎ করে তাদের সুখের সংসারে নেমে আসে কালো ছায়া। মুদি দোকানদার তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। আর গর্ত খুঁড়ে তাদের মা-বাবাকে মেরে ফেলে। কোনো মতে ইঁদুরটি তার দুই ভাইকে নিয়ে পালিয়ে এসেছে। নয়তো মা-বাবার সঙ্গে তাদেরও প্রাণ যেত। ইঁদুরটি প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে মা-বাবাকে হারিয়ে। সে ভাবতে থাকে মানুষ কীসের জন্য তাদের দেখলেই মেরে ফেলতে চায়। বুঝতে পারে- হয়তো তার বাবা-মায়ের কাজগুলোই তার জন্য দায়ী। কারণ মুদি দোকানদার গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে বলছিল আমার ক্ষতি করে তোমরা পার পাবে না। এখন সে প্রতিজ্ঞা করেছে যে চুরির জন্য সে তার মা-বাবাকে হারিয়েছে, সেই চুরি সে কোনো দিনও করবে না।

তার ছোট দুই ভাইকেও এই চুরির মতো খারাপ কাজ করতে দেবে না। প্রয়োজনে তাকে হাজার দূরের পথ পাড়ি দিয়েও খাবার খুঁজে আনবে। প্রয়োজনে দু-এক বেলা না খেয়ে থাকবে, তবুও অন্যায় করবে না। চুরি যে মস্ত বড় পাপ। ইঁদুরটি ভাবতে থাকল কীভাবে এই পাপ থেকে সে বাঁচবে এবং তার ভাইদের রক্ষা করবে। সে সিদ্ধান্ত নিল গ্রামের পণ্ডিত মশাইয়ের কুটিরে যাবে। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। সে গ্রামের পণ্ডিত মশাইয়ের কুটিরে গিয়ে লুকিয়ে বসে থাকল। একসময় পণ্ডিত মশাইয়ের কাছে একটি লোক এসে জানতে চাইল পাপ থেকে বাঁচতে কী করতে হবে? পণ্ডিত মশাই উত্তর দিলেন নিজেকে শুদ্ধ করতে হবে, আর নিজেকে শুদ্ধ করতে হলে, সদা সত্য কথা বলতে হবে, সৎপথে চলতে হবে, চুরি করা যাবে না, কারো গিবত করা যাবে না।

পণ্ডিত মশাইয়ের এতগুলো কথা শুনে লোকটি হতাশ হয়ে আবার প্রশ্ন করল, এতগুলো বিষয় আমি কীভাবে আয়ত্তে আনব? উপায় কী? পণ্ডিত মশাই তখন বললেন, শিক্ষাগ্রহণ করা। ইঁদুরটি মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনে চুপি চুপি বেরিয়ে গেল।

পরের দিন থেকে ইঁদুর সিদ্ধান্ত নিল সে প্রতিদিন স্কুল গিয়ে লেখাপড়া শিখবে আর বাড়িতে এসে তার ভাইদের শেখাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। প্রতিদিন সকালে উঠে ইঁদুরটি স্কুলে চলে যেত। গর্ত থেকে উঁকি দিয়ে দিয়ে স্কুলের পড়াশোনা দেখত। স্কুলর ডাস্টবিন থেকে সংগ্রহ করা খাতায় সেগুলো লিখত। আর প্রতিদিন রাতে সে খাবার খুঁজতে বের হতো। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ইঁদুরটি মানুষের ফেলে দেওয়া খাবারগুলো কুড়িয়ে আনত। এভাবেই পরিশ্রম করত। প্রতিদিন যে হোমওয়ার্ক দেওয়া হতো, সে সেই হোম ওয়ার্কগুলো নিজে নিজেই করে পরের দিন শিক্ষকের বোর্ডের সঙ্গে মেলাত। আর বাড়ি গিয়ে তার ভাইদের শেখাত। এভাবে আস্তে আস্তে তারা পড়াশোনা প্রায় শিখে ফেলে এবং চুরি করা, অন্যের ক্ষতি করা, গিবত করা, মারামারি করা সবকিছু ভুলে যায়। তারা শুদ্ধভাবে, সুন্দরভাবে বসবাস করে। কোনো মানুষও তাদের আক্রমণ করে না। তারা বুঝতে পারে ভালো থাকতে হলে শুদ্ধ হতে হয়। আর শুদ্ধ হতে হলে পড়াশোনা করতে হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close