মো. আশতাব হোসেন

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

রক্তে কেনা বাংলা ভাষা

শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিমপাড় ঘেঁষে আছে লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস। মিলটিতে আগের মতো নেই শ্রমিকদের পদাচারণ। তাঁতের খটখট ঝুমুর ঝুমুর ছন্দও নেই। ২০২০ সালের জুলাই মাসে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। মিলটি বন্ধ হওয়ার পর গাছগাছালি নিরাপদ বেড়ে উঠছে। গাছগুলোতে অনেক পাখপাখালিরও বেশ সমাগম ঘটেছে। জালালি কবুতর মিলটিতে আগে থেকেই স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় কবুতরের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে এসেছে কটি বানর তারাও স্বাধীনভাবে এগাছ-ওগাছে রাজকীয় হালে ঘোরাঘুরি, নাচানাচি করে, মনে হয় সবকিছুই তাদের একক সত্তা।

বসন্ত আগমনের বার্তা দিচ্ছে কদিন থেকে কোকিল কোকিলা। মিলের চারপাশের দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে সারিবদ্ধ নারকেলগাছ। নারকেলগাছের মাঝে মাঝে অনেক গাছই দাঁড়িয়ে রয়েছে। মনে হয় যেন এসব গাছ মিলের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে নিজেরাও পাহারাদারের কাজে নিয়োজিত আছে। সব গাছ ডিঙিয়ে মিলের পূর্বপাশে শোভা বিলাচ্ছে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। প্রতি বছরের মতো এ বছরের মাঘ মাস শেষে হলে, এই ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফুটে ভাষার মাস আগমনের জানান দিচ্ছে।

বর্তমানে কৃষ্ণচূড়াগাছটি নিয়েই যেন পাখিদের আয়োজন। প্রতিদিন সকাল হতেই গাছটিতে নানা প্রজাতির পাখি, ভ্রমর ও মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে উঠছে। সবাই যেন ফুলে ফুলে বসে কানে কানে বলছে হে ফুল, সব জানো তো তোমরা? তোমাদের গায়ের রং এত উজ্জ্বল হওয়ার কারণ? ফুলগুলো পাখি ও মৌমাছিদের কানে কানে বলছে, হ্যাঁ হ্যাঁ জানি। জানি দেখেই তো আমরা ভাষা আনন্দে শহীদ ভাইদের প্রাণভরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ফুটেছি। তখন সব পাখি ও মৌমাছির কণ্ঠে গুণগুণ করে করে বেজে ওঠে শহীদ স্মৃতি অমর হোক। বাংলা ভাষার বিস্তার হোক দেশ থেকে, দেশান্তর।

তাদের সঙ্গে ফুলগুলোও বলে আমাদের কেউ নষ্ট করবে না, আমরা এই ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বাংলা ভাষার বিজয় সৌরভ বিলিয়ে, শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঝরে চলে যাব আড়ালে। আর তোমরা উড়ে উড়ে বিভিন্ন দেশে গিয়ে এই বাংলা ভাষা অর্জনের রক্তিম ইতিহাস ভিনদেশিদের কাছে তুলে ধরবে। সেই সঙ্গে বলবে রক্তে কেনা বাংলা ভাষা বেঁচে থাকুক চিরকাল, শহীদ স্মৃতি আমর হোক। অমর হোক রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা সব ভাষাশহীদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close