আরিফুর রহমান সেলিম

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গঙ্গাবুড়ির দুষ্টু বন্ধু

গঙ্গাবুড়ির মন আজ ভীষণ খারাপ। গত জন্মদিনে বাবা তাকে যে সুন্দর জুতো কিনে দিয়েছিল সেই জুতোগুলো সে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। তার খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে গঙ্গাবুড়ি কেঁদে ফেলে। তখন মা তাকে খুঁজে দেয়। তাই সে মায়ের কাছে গেল আর বলল, মা আমি আমার সুন্দর জুতোগুলো খুঁজে পাচ্ছি না। মা বললেন, মন খারাপ করো না। আমি খুঁজে দিচ্ছি।

আম্মু সারা ঘরে খুঁজলেন, কিন্তু কোথাও পেলেন না। গঙ্গাবুড়িকে সান্ত¦না দিয়ে বললেন, কোথাও যেহেতু খুঁজে পেলাম না এক কাজ করব, তোমার আব্বুকে বলব তোমার জন্য নতুন এক জোড়া জুতো কিনে আনতে। গঙ্গাবুড়ি তবু খুশি হতে পারল না। নতুন জুতো না জানি দেখতে কেমন হয়। এই জুতোগুলোর মতো এত সুন্দর হবে কি না। নানা ভাবনা তার মাথায় এসে জড়ো হতে লাগল। সারাটা বিকেল তার কাটল মন খারাপ করে।

সন্ধ্যা সময় শুভ পড়তে বসে। শুভ এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। শুভর বাংলার বইয়ে কত সুন্দর সুন্দর ছড়া, কবিতা, আর গল্প। সময় পেলেই শুভ তার আদরের বোন গঙ্গাবুড়িকে গল্প শোনায়, কবিতা শোনায়। আজকেও শুভ গঙ্গাবুড়িকে একটা গল্প শোনাতে চাচ্ছিল। কিন্তু গঙ্গাবুড়ি বলল, তার মনটা আজ ভীষণ খারাপ। সে আজ গল্প শুনবে না। তার জন্মদিনে পাওয়া জুতোগুলো সে হারিয়ে ফেলেছে। সারা ঘর খুঁজে সে কোথাও পাচ্ছে না। শুভ তখন হাসতে হাসতে বলল, আরে বোকা মন খারাপ করিস না, আমি তো তোর জুতোগুলো একটা ঝুড়ির ভেতর লুকিয়ে রেখেছি। ঝুড়িটা কোথায় আছে জানিস? ঝুড়িটা আছে খাটের নিচে। চল আমরা দুজনে মিলে জুতোগুলো বের করে আনি।

মহা-আনন্দ নিয়ে শুভ আর গঙ্গাবুড়ি যখন ঝুড়িটা খুঁজে পেল, তখন তো তারা দুজনেই অবাক হয়ে গেল। ওমা এগুলো কী? কি সুন্দর! পিটি পিটি চোখ, তুলতুলে গা, ধবধবে সাদা এগুলো কার বাচ্চা ঝুড়ির ভেতর! দুজনেই আম্মু আম্মু বলে ডাকতে লাগল। গঙ্গাবুড়ি আর শুভর ডাক শুনে মা দৌড়ে গেলেন। গিয়ে দেখলেন জুতো ফিরে পেয়ে গঙ্গাবুড়ি তো অনেক খুশি। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়ে অবাক হয়ে আছে ছোট বাচ্চাগুলো দেখে। আম্মুকে তো গঙ্গাবুড়ি জিজ্ঞাসা করে বসল, বলো তো আম্মু এগুলো কীসের বাচ্চা। আম্মু তখন বলল, এগুলো হলো ইঁদুরের বাচ্চা। মা বললেন, এখনই এগুলোকে বাইরে ফেলতে হবে। ভাগ্য ভালো দুষ্টু ইঁদুর আমার মেয়ের সুন্দর জুতোগুলো নষ্ট করেনি। শুভ আর গঙ্গাবুড়ি বলল, না মা এগুলো এখন বাইরে ফেলো না। আমরা সকাল হলে বাইরে ফেলব।

গঙ্গাবুড়ি আর শুভ এখন মহাব্যস্ত ইঁদুরের বাচ্চা নিয়ে। ইঁদুরের বাচ্চার তুলতুলে শরীর আর পিটপিটে চোখের দিকে তাকালে খুব মায়া লাগে। শুভদের একটা বিড়াল আছে। নাম কিটকিট। কিটকিটও দেখতে খুব সুন্দর। সারাক্ষণ মিউ মিউ করে আর গঙ্গাবুড়ি ও শুভর ঘা ঘেঁষে থাকে। গঙ্গাবুড়ি যখন খেতে বসে তখন বিড়ালটা গঙ্গাবুড়ির কাছে এসে মিউ মিউ করে। তখন গঙ্গাবুড়ি নিজের খাবার থেকে কিটকিটকে কিছু খেতে দেয়। কিটকিটকে গঙ্গাবুড়ি অনেক আদর করে।

শুভ জানে বিড়ালের এক নম্বর শত্রু হলো ইঁদুর। সুযোগ পেলেই বিড়াল ইঁদুরকে মারতে আসে। টিভিতে কার্টুনে শুভ এটা দেখেছে। সে গঙ্গাবুড়িকে তা খুলে বলল। গঙ্গাবুড়ি তখন বলল, তাহলে কীভাবে কিটকিটের হাত থেকে ইঁদুর ছানাগুলোকে বাঁচানো যায়। শুভ অনেকক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিল সকালে লেবু বাগানে ইঁদুর ছানাকে ঝুড়িসহ রেখে আসব। যেহেতু লেবু বাগানটা কাছেই তাই ইঁদুরের মা বাচ্চাগুলোকে খুঁজে পাবে। আমরা মাঝে মাঝে বাচ্চাগুলোকে দেখতে যাব।

পরদিন সকাল হলো। সূর্য উঠল। শুভ গঙ্গাবুড়িকে ডেকে তুলল ঘুম থেকে। ঝুড়ি নিয়ে তারা গেল লেবু বাগানে। সেখানে রেখে এলো ইঁদুর ছানাগুলোকে। আর পাহারা দিতে লাগল কিটকিট যেন সেখানে যেতে না পারে। গঙ্গাবুড়ি কিটকিটকে চোখে চোখে রাখল। সে জানে কিটকিট ইঁদুর ছানাগুলো পেলে সর্বনাশ করে ফেলবে। এভাবে দিন যেতে লাগল। এক দিন শুভ ও গঙ্গাবুড়ি দেখল ঝুড়িতে ইঁদুর ছানাগুলো নেই। শুভ বলল, নিশ্চয়ই ইঁদুর ছানাগুলো তার মায়ের সঙ্গে নানাবাড়িতে বেড়াতে গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close