অলোক আচার্য
কলাগাছের শহীদ মিনার
বিল্টুরা এবার শহীদ মিনার বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিল্টুরা মানে বিল্টু, মানিক, শুভ, সাঈদা আর মনি। ওরা সবাই এবার ক্লাস ফাইভে উঠেছে। সবার বাড়িও পাশাপাশি। স্কুলের শিমু ম্যাডাম ওদের এই আইডিয়াটা দিয়েছেন। আইডিয়া মানে ম্যাডাম ছোটবেলায় কীভাবে শহীদ মিনার বানাত, সেই গল্প করেছিল। ভাষাশহীদদের ইতিহাস ম্যাডাম এত চমৎকার করে বলেছিল যে, ওরা সেদিনই পরিকল্পনা করেছিল এবার ওরা নিজেরাই শহীদ মিনার বানাবে। কথামতো ওরা ম্যাডামকেও ওদের পরিকল্পনার কথাটা জানাল। শুনে ম্যাডাম খুব খুশি হলেন। বললেন, তোমরা শহীদ মিনার বানাও আর স্কুলের শহীদ মিনারে সবাই এসে ফুল দিয়ে যেতে। তা ছাড়া ম্যাডামও ওদের শহীদ মিনার দেখতে যেতে রাজি হলেন। বানাতে তো চাইল কিন্তু কী দিয়ে শহীদ মিনার হবে সেই চিন্তাতেই সবার ঘুম ছুটে গেল। কারণ একে তো ওরা সবার ছোট, তারপর আবার বাবা-মা সম্মতি দিচ্ছিল না। অনেক চিন্তাভাবনা করে ওরা কূলকিনারা করতে পারে না। শেষে বিল্টুর মাথায় আইডিয়াটা আসে। ও বলে আমরা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাতে পারি। সবাই ভেবে দেখে আসলেই এটা করা সম্ভব। যেই কথা সেই কাজ। ওরা লেগে যায় কলাগাছ জোগাড় করতে। তারপর সেগুলো দিয়েই বানিয়ে ফেলে শহীদ মিনার। কলাগাছের শহীদ মিনার।
পাড়ার সবাই ওদের শহীদ মিনারের প্রশংসা করে। শহীদ মিনার বানাতে বানাতে অনেক রাত হয়ে যায়। ওরা ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে যায়। সবাই উঠেই ছুটে আসে ওদের বানানো শহীদ মিনারের কাছে। গিয়ে তো ওদের চোখ চড়কগাছ হয়ে যায়। ওদের বানানো শহীদ মিনারটা কে যেন ভেঙে রেখে গেছে! কে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারে, তা ভেবেই পেল না। এদিকে স্কুলেও যেতে হবে। ওরা কিছু ফুল নিয়ে স্কুলে যায়। শিমু ম্যাডাম ওদের শহীদ মিনারের কথা জিজ্ঞাস করতেই ওরা সব কথা খুলে বলে। ওদের কথা শুনে ম্যাডাম দেখতে আসে। সত্যি ম্যাডাম অবাক হয়ে যান। এমন একটা কাজ কোনো মানুষ করতে পারে ভেবে।
তারপর ওদের সবাইকে কাছে ডেকে ম্যাডাম সান্ত¦না দেন। ওদের ইতিহাসের প্রথম শহীদ মিনারের গল্প শোনান। প্রথম শহীদ মিনার যে পাকিস্তানিরা ভেঙে দিয়েছিল এবং তারপরও যে বাঙালি দমে যায়নি সেই গল্প শোনান। ইতিহাসের কাহিনি শুনে ওরা আবার পুরোদমে কাজে লেগে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওরা আরেকটা শহীদ মিনার বানিয়ে ফেলে। তারপর সবাই মিলে সেখানে ফুল দেয়। শিমু ম্যাডামও সেখানে ফুল দেয়। একসঙ্গে গেয়ে ওঠে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি!’
"