সাগর আহমেদ
কিডন্যাপারের কবলে কিশোর দল
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের কাছেই শাওলিন উসু কুংফু ক্লাব। এখানে বিকেল বেলা কুংফু, কারাতে, জুজুৎসু শেখে অপু, তিয়ান ও টিয়ানা। শুক্রবার যথারীতি ওদের শাওলিনে ক্লাস চলছিল। শেখাচ্ছিলেন ওস্তাদ ছোটন শেখ। তিনি ব্লাক বেল্ট (সেকেন্ড ডান) সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত। মাঝে মাঝে যা একটা ফ্লাইং কিক মারেন না! অপু বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে, সেও ছোটন ওস্তাদের মতো কুংফু শিখবে। সমাজের দুষ্ট লোকদের দমন করবে। এমন সময় এসে হাজির হলেন টোকন মামা। তিনি ঢুকেই ওস্তাদ ছোটন শেখকে বললেন, ‘কেমন আছেন ভাই, ওদের কুংফু শেখা ঠিকমতো চলছে তো?’ ওস্তাদ ছোটন শেখ হেসে হেসে বললেন, আপনার ভাগনে, ভাগনিরা তো এ বিষয়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ওদের জুড়ি নেই।’
টোকন মামা শুনে খুশি হলেন, তারপর অপুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই ইতালির সিসিলি দ্বীপে যাব। খুব সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জায়গা। তোরা যাবি নাকি? গেলে বলে ফেল, হাতে সময় কম। কাগজপত্র রেডি করতে হবে। মামার এতগুলো কথা একসঙ্গে শুনে অপুরা হেসে ফেলল, তারপর একসঙ্গে সবাই মাথা কাত করে সম্মতি জানাল। দিন পনেরো পরের কথা। টোকন মামা ও কিশোর দল এখন সিসিলি দ্বীপের কিয়ান হৃদে গোল আকৃতির গন্ডোলা নামক এক বড় নৌকায় বসে আছে। টিয়ানা আঁজলা ভরে পানির ছিটা দিচ্ছে তার চোখে-মুখে। হৃদের চারপাশে জলপাই গাছ। এই জলপাই তেল-ই একসময় ইতালির প্রধান রপ্তানি দ্রব্য ছিল।
হঠাৎ টিয়ানা অপুকে বলল, ‘ওই জলপাইগুলোর একটি তোর গুলতি মেরে ফেল দেখি, তবেই বুঝব তুই মস্ত ওস্তাদ।’ অপু কিছু না বলে গুলতিতে মার্বেল জুড়ে একটা জলপাইকে টিপ করে মারল। সঙ্গে সঙ্গে জলপাইটি খসে হৃদের পানিতে পড়ল। সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। কিন্তু এই বিস্ময় বেশিক্ষণ থাকল না। দূর থেকে কয়েকটি নৌকা চড়ে কতগুলো লোক হই হই করতে করতে ওদের নৌকার দিকে আসছে। কিছুটা কাছে আসতেই ওদের হাতে বাঁশের লাঠিতে বাঁধা ধারালো কাটা বা ফর্ক দেখা গেল। ধীরে ধীরে নৌকাগুলো অপুদের নৌকা ঘিরে ফেলল। টপটপিয়ে কয়েকজন নৌকায় উঠে অপুদের বন্দি করে ফেলল। শুধু এক ফাঁকে টোকন মামা ঝাঁপ দিয়ে হৃদে পড়ে ডুব সাঁতার দিয়ে পালিয়ে গেলেন।
দুর্বৃত্তরা কয়েকটি বর্শার মতো ফর্ক মামার দিকে ছুড়ে মারল, কিন্তু লাগাতে পারল না। তিয়ান একটু ভয় পেয়েছে, কিন্তু দমে গেল না। সে দুর্বৃত্ত সর্দারকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমাদের বন্দি করেছেন কেন?’ লোকটা একচোট হেসে তারপর বলল, ‘তোদের জিম্মি করে ভালো টাকা কামাব। এখন চল আমাদের সঙ্গে।’ ওরা অপু তিয়ান ও টিয়ানার চোখ, মুখ বেঁধে ফেলে নৌকায় করে এগিয়ে চলল। তারপর এক জায়গায় থেমে সবাইকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। গাড়ি অনেকটা দূর গিয়ে একটা রাজপ্রাসাদের মতো বিশাল বাড়ির সামনে এসে থামল। তারপর অপুদের এক বিশাল হলরুমে এনে হাজির করল। সেখানে সিংহাসনের মতো একটা চেয়ারে বসে আছে মাফিয়া নেতা সিলভিও বালুচ্চি ডুচি। সে টিয়ানাদের দেখে অমায়িকভাবে হাসল, তারপর প্রশ্ন করল, তোমাদের দেশ কোথায়?’ টিয়ানা ফস করে বলে বসল, ‘বাংলাদেশ’। ডুচি তখন দুর্বৃত্তদের সর্দারটাকে বলল, ‘ওদের তিনতলার কারাগারে বন্দি করে ওদের পরিবারকে ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে খবর দাও, আমাদের এক মিলিয়ন ডলার লাগবে। অন্যথায় ওরা জ্যান্ত ফেরত যাবে না।’ এ কথা শুনে সর্দার গোছের লোকটি মাথা ঝাঁকিয়ে অপুদের নিয়ে চলল বন্দিশালায়।
তবে লোকটি একটি ভুল করল। অপুরা ছোট বলে ওদের সার্চ করে দেখার প্রয়োজন বোধ করল না। বন্দিশালায় গিয়ে ওরা কিছুটা ভয় পেল, কিন্তু সাহস হারাল না। অপু দেখল কারাগারের বাইরে একটা গার্ড হেঁটে বেড়াচ্ছে। সে প্রথমে ওকে কিছু বলল না। প্রায় একঘণ্টা চলে গেল। তারপর তিয়ান অপুর ইশারায় গার্ডকে ডাকল। গার্ড কাছে আসতেই অপু আড়াল থেকে গার্ডের কপাল বরাবর গুলতি দিয়ে মার্বেল ছুড়ে মারল। গার্ড একটা চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে ওখানেই পড়ে গেল। তিয়ান সঙ্গে সঙ্গে গার্ডের কোমর থেকে চাবি খুলে নিয়ে গেট খুলে ফেলল। অপু, তিয়ান ও টিয়ানা দৌড়ে পালাতে লাগল। একটু দূরে যেতেই টিয়ানা একটা তার জড়ানো মেটাল বক্সের সঙ্গে হোঁচট খেল। সঙ্গে সঙ্গে সারা বিল্ডিংয়ে ওয়ার্নিং বেল বাজতে থাকল। ওরা তিনতলা থেকে একতলায় নেমে একটা হলরুমে এলো। সঙ্গে সঙ্গে রুমের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে একটা গুপ্ত সুড়ঙ্গ খুলে গেল। তা দিয়ে ঘরটিতে হরহর করে পানি ঢুকতেই লাগল। টিয়ানা আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠল। ধীরে ধীরে গলা সমান পানিতে হলরুমটা ভরে উঠল। কিছুক্ষণ পরই ওই বিশাল সুড়ঙ্গ দিয়ে একটা দানবাকৃতি অক্টোপাস হলরুমে প্রবেশ করল।
অপুদের দেখেই তার লাল চোখ যেন রাগে ব্যাটারির মতো জ্বলে উঠল। সে অপু, তিয়ান ও টিয়ানাকে লক্ষ্য করে তার শুঁড় দিয়ে কালির মতো আঠালো এক রকম পদার্থ ছুড়ে মারল। অপু, তিয়ান ও টিয়ানা দ্রুত সেখান থেকে সরে গেল। এরপর বিদ্যুৎ বেগে অক্টোপাসটি টিয়ানাকে তার শুঁড়গুলো দিয়ে জড়িয়ে ধরে খেয়ে ফেলার জন্য মুখের দিকে টানতে লাগল। অপু সঙ্গে সঙ্গে তার গুলতি দিয়ে বড় বড় কয়েকটি মার্বেল অক্টোপাসের চোখ দুটোর দিকে ছুড়ে মারল। অক্টোপাস ব্যথায় কাতর হয়ে টিয়ানাকে ছেড়ে দিতেই, তিয়ান তার ধারালো, বাঁকা ছুরিটি দিয়ে অক্টোপাসের পেট বরাবর কয়েকটি আঘাত হানল। ধীরে ধীরে রক্তে পানি লাল হয়ে উঠল। অক্টোপাসটি মরে পানিতে ভেসে উঠল। অপু, তিয়ান ও টিয়ানা তখন বাইরে বের হওয়ার দরজাটা খুঁজতে লাগল। একসময় তারা দরজাটা পেয়ে গেল এবং সবাই মিলে দরজার গায়ে লাথি মারতে শুরু করল। ওরা আশ্চর্য হয়ে অনুভব করল, বাইরে থেকেও কারা যেন দরজায় আঘাত হানছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা ভেঙে যেতেই ওরা বাইরে বেরিয়েই অবাক হলো। এ যে টোকন মামা! পুলিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
টোকন মামা বলল, ‘আমি পালিয়ে গিয়ে ওদের অনুসরণ করে আগে এই বাড়িটা চিনেই নেই, তারপর পুলিশ নিয়ে এলাম।’ সবাই আনন্দে টোকন মামাকে জড়িয়ে ধরল। ওদিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাফিয়া চিফ ডুচিকে সাঙ্গপাঙ্গসহ গ্রেপ্তার করল। ইতালি ভ্রমণের বাকি দিনগুলোতে আর কোনো ঝামেলা হলো না।
"