মহিব্বুল্লাহ কাফি

  ২৫ নভেম্বর, ২০২৩

মুরগির অবাধ্য ছানা

অগ্রহায়ণের রৌদ্রময় দিন শেষে পৌষের রোদেলা দিনের ফাঁকে ফাঁকে শীত শীত ভাব ওড়াউড়ি করছে। কৃষকরা সোনালি পাকা ধান কেটে ঘরে ওঠাচ্ছেন। সোনালি ধানে গোলা ভরছে। কেউ ধান সেদ্ধ দিচ্ছেন। কেউ কড়া রোদে খলাতে ধান শুকাচ্ছেন। তাই সবার বাড়িজুড়ে ধানের ছড়াছাড়ি। মাঠ, ঘাট, উঠোন, বাড়ির চৌকাঠ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের এদিক-সেদিক, পুকুর পাড়ে শুধু ধান আর ধান। তাই হাঁস, মুরগিরা এই এ মৌসুমে পেটপুরে খেতে পারে। যেখানে যাবে ধান আর ধান। অগ্রহায়ণ-পৌষের ধান কাটার সিজন এলেই হাঁস-মুরগির দল বেশ তরতাজা হয়ে ওঠে। দেখতে হয় নাদুসনুদুস।

তবে, এই মাসে হাঁস-মুরগির শত্রুদের আনাগোনাও বেশ বেড়ে যায়। কারণ, খাবার খেতে খেতে হাঁস-মুরগির ছানারা দলচ্যুত হয়ে যায়। কখন যে তারা মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায় টেরই পায় না। আর সেই সুযোগেই শিয়াল, চিল এসে তাদের শিকার করে নিয়ে যায়।

এই তো কিছুদিন আগের ঘটনা। হঠাৎ ঝিরঝিরানি বৃষ্টি। রাতে মুরগির বড় ছানাকে শিয়াল পণ্ডিত প্রায় শিকার করেই ফেলেছিল। যদি না মা মুরগি ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ খোলতেন।

বড় ছানাটা বড্ড দুষ্টু। মা মুরগির কথা শুনেই না।

মা মুরগি বললেন, বাবা তুমি আমার দুই হাতের উষ্ণ পালকের নিচে ঘুমাও। তোমার ভাই-বোনদের সঙ্গে। তাহলে ঠাণ্ডা তো লাগবেই না, বিপদও হবে না। বলা তো যায় না শিয়াল পণ্ডিত আমাদের ঘরের আশপাশেই হয়তো ঘোরাফেরা করছে। সুযোগ পেলেই আক্রমণ করবে।

কিন্তু কে শোনে কার কথা।

বড় ছানা বলে, এই শীতেও তোমার ওই পালকের নিচে ঘুমাতে আমার গরম লাগে। তাই আমি পালকের নিচে না ঘুমিয়ে তোমার পাশেই ঘুমাই। মা মুরগির অবাধ্য ছানা ঘুমালোও তাই।

মা মুরগির কি আর ঘুম হয়? তবু মা মুরগির চোখ লেগে গেল। হঠাৎ আঁচ পেয়ে মা মুরগি চোখ খোলে দেখেন শিয়াল মাত্র বেড়া ফাঁক গলে মাথাটা ঢুকিয়েছে। মুরগির বড় ছানাকে শিকার করবে করবে। অমনি মা মুরগি চেঁচিয়ে উঠলেন। পালিয়ে গেল শিয়াল।

কিন্তু এখন শিয়ালের থেকে বেশি উৎপাত চিলের। ভয়টা তো এখন আকাশের চিলকে নিয়ে। চিল সারাদিন মাথার ওপর ঘোরাঘুরি করে। টার্গেট বানায়। যত চিন্তা ছানাদের নিয়ে। কদিন ধরে আকাশে হিংস্র চিলের বেশ উৎপাত চলছে। মাথার ওপর ঘুরে বেড়ায়। মুরগির ছানা খোঁজে। আকাশে চিলের বিশাল তার ছায়া মাটিয়ে ধাপড়িয়ে বেড়ায়। তা দেখে মুরগির ছানাদের পিলে কেঁপে ওঠে। তাই মা মুরগি তার ছানাদের বলে দিলেন, তোমরা কেউ আমি মায়ের থেকে বেশি দূরে যাবে না। আমাদের শত্রু চিল সুযোগ পেলেই তার ধারালো নখ দিয়ে থাবা দেবে। খাবার খেতে খেতে বেমালুম ভুলে যেয়ো না কিন্তু চিল শত্রুর কথা। আকাশে চিল দেখলেই মায়ের পালকের নিচে চলে আসবে। আমি মা থাকতে তোমাদের কোনো ভয় নেই। তোমরা যদি আমি মায়ের আশপাশে থেকে খাবার খাও, খেলাধুলা করো তাহলে চিলের সাহস নেই তোমাদের ওপর আক্রমণ করার। কিন্তু দূরে গেলেই বিপদ।

মা মুরগির কথামতো সবাই একসঙ্গে খাবার খায়। মা মুরগির আশপাশেই থাকে। কিন্তু বিপত্তি ওই বড় ছানাকে নিয়ে। সে এদিক-সেদিক চলে যায়। মায়ের কাছে থাকতে চায় না। তবু মা মুরগি চোখে চোখে রাখেন। একটু দূরে গেলেই চেঁচিয়ে ওঠেন মা। ছানারা খাবার তালাশ করে খায়। মায়ের আশপাশেই। যখনই আকাশে চিলের ওড়াউড়ি দেখে বা চিলের ছায়া নিচে পড়তেই সব ছানা দেয় ছুট। মা মুরগি দুপালক উঠিয়ে দেন। ছানারা পালকের মধ্যে মায়ের পালকের নিচে ঢুকে যায়। মায়ের আশ্রয়ের মতো নিরাপদ আশ্রয় আর কোথায় আছে?

মা মুরগি চোখে চোখে রাখেন ছানাদের। কিন্তু বড় ছানার ভালো লাগে না। মায়ের চোখে চোখে থাকতে। সে বিরক্ত হয়। বলে, আমি কি এখনো সেই ছোট্ট ছানাটি রয়েছি যে, আমাকে চোখে চোখে রাখতে হবে?

অবাধ্য ছানার এমন কথা শুনে মা মুরগি বললেন, মায়ের কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। তা ছাড়া চিলের কাছে তুমি এখনো সেই ছোট্ট ছানাই। সুযোগ পেলেই ছোঁ মারবে। তখন তোমার কিছুই করার থাকবে না। সাবধানে থেকো বাবা।

সেদিন ছানাগুলো খাবার খাচ্ছিল। মা মুরগি পেছন পেছন ছিলেন। বলা তো যায় না কখন চিল চলে আসে। তাই মা মুরগি সবার পেছনে খুঁটে খুঁটে খাবার খাচ্ছিলেন। আর ছানাদের রাখছিলেন চোখে চোখে। কিন্তু বড় ছানাটা মা মুরগির চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে গেল একটু দূরে। অনেকটা মা মুরগির চোখের আড়ালে।

হঠাৎ মা মুরগি দেখলেন আকাশে চিলের ওড়াউড়ি। ছানাদের চারপাশে চিল শত্রুর ছায়া ঘুরছে। তাই মা মুরগি চেঁচিয়ে উঠলেন, ছানারা তোমরা সবাই আমার দুহাতের পালকের নিচে চলে আসো। আকাশে শত্রুর আগমন ঘটেছে। যখন-তখন আক্রমণ হতে পারে। মা মুরগির ঘোষণা শোনে মুহূর্তের ভেতর ছানারা ভোঁদৌড়। এক দৌড়ে চলে গেল মায়ের পালকের নিচে। মা মুরগি লক্ষ করলেন সবাই এলেও আসেনি তার বড় ছানা। তাই মা এদিক-সেদিক চোখ বোলাতে লাগলেন এবং বড় ছানাকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। মা মুরগি অস্থির হয়ে উঠলেন।

হঠাৎ মা মুরগি দেখলেন তার বড় ছানা অনেকটা দূর থেকে দৌড়ে আসছে। চিঁ চিঁ আওয়াজ করতে করতে। পেছনে শত্রু চিল। চিলের থাবা পড়ল পড়ল অবস্থা। এই না দেখে মা মুরগিও দিলেন দৌড়। ছানাকে বাঁচাতে। কিন্তু মা মুরগি ছানার কাছে যেতে যেতেই চিল তার দুপায়ের ধারালো নখ দিয়ে ছোঁ মেরে ধরে ফেলল ছানাটিকে। দুডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে ওড়াল দিল আকাশে। মা মুরগি নিচ থেকে চিঁ চিঁ করে কান্না করতে লাগলেন। চিলের ছোঁ থেকে মা বাঁচাতে পারলেন না তার অবাধ্য ছানাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close