অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী

  ২৮ মার্চ, ২০২৪

কিডনি ভালো রাখার উপায় জানুন

পৃথিবীজুড়ে ১০ জনে ১ জন মানুষ ভুগছে কিডনি রোগে। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডির ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিডনি বিকলে মানুষের সংখ্যা ৩১ লাখ! বিশ্বে বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি হিসেবে কিডনি রোগের স্থান সপ্তম। বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে এই রোগে প্রতিবছর মারা যায় ৫০ লাখ থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ। আর যেখানে কিডনি রোগে সেবার সুবিধা কম, সেখানে এর মৃত্যুহার বেশি।

এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ক্রনিক কিডনি রোগে প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য। ক্রনিক কিডনি রোগের ক্ষেত্রে লাতিন আমেরিকা, আমেরিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলে বেশি। তবে আমাদের দেশেও এ রোগের প্রকোপ কম নয়।

ক্রনিক ডিজিজ বা সিকেডি হলে ব্যক্তি ও রাষ্ট্র- দুটোর ওপরই চাপে বিশাল অর্থনৈতিক বোঝা। একে সামাল দেওয়া কঠিন। ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যয় আছে। আছে সহযোগী বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যয়ও। কেবল তা-ই নয়; কিডনি রোগ সম্বন্ধে জ্ঞান ও সচেতনতা এবং কিডনি সেবার বাস্তবায়নেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। কিডনি ভালো রাখার কয়েকটি উপায় জেনে নিন-

থাকুন সুস্থ, সবল ও সক্রিয় : এতে বজায় থাকবে আদর্শ দেহ ওজন। কমবে রক্তচাপ। ফলে কিডনি থাকবে সুস্থ। এ জন্য প্রতিদিন হাঁটুন, দৌড়ান কিংবা সাইকেল চালান।

খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার : এতে ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি ক্রনিক কিডনি রোগের সঙ্গে যুক্ত রোগ, যেমন ডায়াবেটিস কিংবা হৃদ্?রোগের মতো রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। কমাতে হবে লবণ খাওয়া। দিনে ৫ থেকে ৬ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। ফাস্ট ফুড অথবা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে।

রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন : ডায়াবেটিসের রোগীদের অর্ধেকই জানেন না যে তারা রোগটিতে আক্রান্ত। তাই সাধারণ শারীরিক চেকআপের সময় রক্তের গ্লুকোজও চেক করুন। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অর্ধেকের হতে পারে কিডনি রোগ। তাই রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে এই রোগ ঠেকানো সম্ভব। রক্ত আর প্রস্রাব পরীক্ষার সঙ্গে নিয়মিত কিডনি টেস্ট করান।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন : রক্তের চাপ বেশি এমন মানুষের অর্ধেক জানেন না যে তাদের শরীরে রক্তচাপ বেশি। এ ক্ষেত্রেও শরীরের সাধারণ পরীক্ষার সময় রক্তচাপ চেক করাতে হবে। রক্তচাপ বেশি থাকলে তা ক্ষতি করে কিডনির। সঙ্গে ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ থাকলে আরও বিপদ। জানা থাকা ভালো যে স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০। একে বেশি হিসাবে ধরা হবে রক্তচাপ ১৪০/৯০ বা এর বেশি হলে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রক্তচাপ ১৩০/৮০ হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ জন্য জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে।

সঠিক পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খান : সাধারণত ৮ কাপ বা ২ লিটার পানি পান করতে হবে। তবে বয়স, জলবায়ু ও পরিবেশের উষ্ণতা, অসুখের কথা বিবেচনায় রেখে কম-বেশি হতে পারে পানি পানের পরিমাণ।

ধূমপান নিষেধ : ধূমপান করলে কিডনিতে রক্তের প্রবাহ কমে যায়। এছাড়া কিডনির স্বাভাবিক কাজকর্মও কমে যায়। ধূমপান করলে কিডনি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে ৫০ শতাংশ। ব্যথা কমানোর ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না। এ ধরনের ওষুধ নিয়মিত খেলে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হয়।

স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করুন। সঙ্গে প্রস্রাবে অ্যালবুমিনের পরিমাণ, রক্তের ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ এবং এগুলোর অনুপাত পরীক্ষা করিয়ে নিন।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close