স্বাস্থ্য ডেস্ক

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

লিভার ক্যানসারের কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা

ক্যানসার মানেই আতঙ্ক। আর তা যদি হয় লিভার ক্যানসার তাহলে তো কথাই নেই। এ কথা সত্যি যে শরীরের বেশির ভাগ ক্যানসারের মতোই লিভার ক্যানসার নিরাময় এখনো আমাদের সাধ্যের অতীত। তবে পাশাপাশি এ কথাও সত্যি যে, লিভার ক্যানসার চিকিৎসায় সম্প্রতি আমাদের অগ্রগতিও কম নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আজ বাংলাদেশে বসেই লিভার ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। লিভার ক্যানসারের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন-

পৃথিবীতেই লিভার ক্যানসার, ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে চার লাখ লোক এ রোগে আক্রান্ত হন। পুরুষদের ক্ষেত্রে মোট ক্যানসারের ৭ দশমিক ৫ ভাগ লিভার ক্যানসার, আর নারীদের বেলায় এ সংখ্যাটি ৩ দশমিক ২ ভাগ। আশঙ্কাজনক সত্যটি এই যে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় লিভার ক্যানসার আক্রান্তের হার পৃথিবীর অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি।

বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যানসারের মূল কারণ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস আর অ্যালকোহল। আমাদের দেশে অবশ্য হেপাটাইটিস বি মূল খলনায়ক, কারণ এ দেশে প্রায় ৮০ লাখ লোক এ ভাইরাসের বাহক। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ৫ থেকে ১০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো একপর্যায়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

লিভার ক্যানসারের লক্ষণ : যেকোনো বয়সের লোকই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি পুরুষদের ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে ৪ থেকে ৬ গুণ বেশি। সাধারণত ক্যানসার হওয়ার আগে লিভারে সিরোসিস দেখা দেয়, তবে এর ব্যতিক্রম হওয়াটাও অস্বাভাবিক না।

লিভার ক্যানসারের রোগীরা প্রায়ই পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে অথবা বুকের ঠিক নিচে মাঝ বরাবর ব্যথা অনুভব করেন যার তীব্রতা রোগী ভেদে বিভিন্ন রকম। সহজেই ক্লান্ত হয়ে পরা, পেট ফাপা, ওজন কমে যাওয়া আর হালকা জ্বর জ্বর ভাব এ রোগের অন্য লক্ষণ। লিভার ক্যানসার রোগীদের প্রায়ই জন্ডিস থাকে না, আর থাকলেও তা খুবই অল্প। রোগীদের খাওয়ায় অরুচি, অতিরিক্ত গ্যাস কিংবা কষা পায়খানার কমপ্লেন থাকতে পারে। পেটে পানি থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে।

লিভার ক্যানসার নির্ণয় করা হয় যেভাবে : লিভার ক্যানসার নির্ণয়ের সহজ উপায় একটি নির্ভরযোগ্য আল্ট্রাসনোগ্রাম। কখনো কখনো সিটি স্ক্যানেরও দরকার পরে। কিছু ক্ষেত্রে লিভার ক্যানসার নির্ণয় করার জন্য আরো আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন এমআরআই ও সিটি এনজিওগ্রামের দরকার পড়তে পারে। রক্তের এএফপি পরীক্ষাটি লিভার ক্যানসারের একটি মোটামুটি নির্ভরযোগ্য টিউমার মার্কার। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত যেকোনো ব্যক্তিরই উচিত প্রতি ছয় মাসে একবার এএফপি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা। তবে লিভার ক্যানসারের ডায়াগনোসিস কনফার্ম করতে হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম এমনকি সিটি গাইডেড এফএনএসি জরুরি।

দেশে লিভার ক্যানসারে চিকিৎসা : লিভার ক্যানসার শুরুতে ধরা পড়লে আর আকারে ছোট থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে এই টিউমার লিভার থেকে কেটে বাদ দেওয়া যায়। পাশাপাশি আছে বিনা অপারেশনে টিউমার অ্যাবলেশন বা টিউমারকে পুরিয়ে দেওয়া। আছে আরো কিছু আশা। যেমন এসেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর, কিন্তু অনেক কম পাশর্^প্রতিক্রিয়ার কেমোথেরাপি জেলোডা ও সবশেষ সোরাফিনেব। দেশে সোরাফিনেব দিয়ে লিভার ক্যানসারের রোগীদের নিয়মিতই চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাই লিভারের ক্যানসারে আশা শেষ হয়নি। তবে দুঃখের বিষয় এই যে রোগীরা এমন পর্যায়ে চিকিৎসা নিতে আসেন তখন কিছুই করার থাকে না। দেশে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা সচেতন কম। ৫ শতাংশ রোগী সময়মতো চিকিৎসকের কাছে আসেন। আর বাকিরা এমন পর্যায়ে আসেন তখন ডাক্তারের কিছু করার থাকে না। এ ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন হতে হবে।

লিভার চিকিৎসায় খরচ : বাংলাদেশে লিভার ক্যানসার চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি লিভার ক্যানসারে চিকিৎসায় ওষুধ তৈরি করছে। তবে জনসাধারণের জন্য চিকিৎসার ব্যয়টা একটু বেশি।

লিভার ক্যানসার প্রতিকারের উপায় : লিভার ক্যানসার একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যেসব ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, সেই সব ভাইরাস প্রতিরোধ করা গেলে ঝুঁকি কমে আসবে। যেমন- বি ভাইরাস, সি ভাইরাস, বি ভাইরাস ছোট বেলায় টিকা দিলে মুক্তি মেলে। সি ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই যখন মানুষ রক্তদান করবেন বা ইনজেকশন নিবেন নতুন সিরিঞ্জ নিয়ে রক্ত নিতে হবে এবং দিতে হবে। একটু সচেতনভাবে যদি জীবন চলে তাহলে অবশ্যই লিভার ক্যানসার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close