গাজী শাহনেওয়াজ

  ১০ জুন, ২০২৪

নৌদুর্ঘটনা রোধ ও যাত্রী নিরাপত্তায় ৬২ নির্দেশনা

আসন্ন ঈদুল আজহায় নৌদুর্ঘটনা রোধ ও পথে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৬২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগ। চলমান দুর্যোগ মৌসুমে আবহাওয়ার সিগন্যাল অনুসরণ করে নৌযান ও ফেরি চলাচল করার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। আর ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি লাঘবে নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো অবস্থায় যাতে ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করতে না পারে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন ও মনিটরিং জোরদার করার সুপারিশ রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। পথের বিশৃঙ্খলা ও যানজট এড়াতে পুুলিশিং কার্যক্রম বাড়ানো সুপারিশ করা হয়েছে। রাতের বেলায় স্পিডবোট ও বালুবাহী বাল্কহেড নিষিদ্ধ রাখতে নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।

সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ঈদুল আজহা উপলক্ষে নৌপথের যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত ও নৌদুঘটনা রোধে কার্যক্রম পদক্ষেপ নেওয়ার অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত সভায় নৌপথে চলাচলের অসুবিধা ও করণীয় ইস্যুতে এসব বিষয় উঠে আসে। সেখানে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে নৌপথ পারাপারের জন্য ফেরির সংখ্যা বাড়ানোর, লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিতকরণ এবং ভাটার সময় অনেক নদী শুকিয়ে যায় নৌচলাচল নিঘির্œত হয় সেজন্য চ্যানেলগুলো ডেজিং করার দাবি জানানো হয়। জবাবে মন্ত্রণালয়, যাত্রীসেবা নিশ্চিতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত বলে সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করা হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার সিনিয়র সহসভাপতি মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত রাস্তায় বাসগাড়িগুলো বিশৃঙ্খলভাবে অবস্থানের কারণে সাধারণকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ সময় মহিলা, শিশু এবং অসুস্থ যাত্রী সাধারণ সদরঘাট টার্মিনালে যেতে এবং টার্মিনাল থেকে বের হয়ে গন্তব্যে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই শৃঙ্খলায় আনতে পুলিশিং কার্যক্রম বৃদ্ধির তাগিদ দেন তিনি।

মানিকগঞ্জের আরিচা-পাটুরিয়া রুটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানান মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার। আর বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী যাত্রীরা যেন নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে পারে তার সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। বলেন, এর জন্য ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, ইচুঁলি ঘাঁটে মাত্র একটি লঞ্চ চলাচল করে। অপরদিকে, লক্ষ্মীপুরগামী চাঁদপুর থেকে লঞ্চ চলাচলের কারণে চাঁদপুর শহর এলাকায় অধিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে আরো কয়েকটি ছোট লঞ্চের অনুমোদন দেওয়া হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে বলে জানান ওই ডিসি। লক্ষ্মীপুরে ডিসি সুরাইয়া জাহান বলেন, ভোলা-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর চ্যানেলে ভাটার সময় পানি থাকে না, ফলে চ্যানেলে লঞ্চ ঢুকতে না পারায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।

জবাব দেন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকসহ অধীনস্থ সংস্থাগুলো। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম মতিউর রহমান জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে আরিচা-পাটুরিয়ায় ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঈদের পূর্বে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হবে। এতে যাত্রী দুর্ভোগ কমবে। বলেন, ফেরি নিরাপদভাবে চলাচল তদারকির জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ইঞ্জিন রুম এবং মাস্টার ব্রিজের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, নৌপথে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে তদন্তে সংশ্লিষ্ট লঞ্চের ফিটনেস সমস্যাটি সবার নজরে আসে। লক্ষ্য করা যায়, ফিটনেস সনদ নিয়ে নৌযানটি দীর্ঘদিন চলাচল না করে বসিয়ে রাখা হয়। উৎসবকে ঘিরে চলাচলের জন্য নামায় ফলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু এবার যাতে ফিটনেসবিহীন কোনো নৌযান চলাচল না করতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে। আর বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, এবার ঈদে মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা অনুযায়ী যাত্রী সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হবে। আর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে যাত্রীবাহী সব লঞ্চের কর্মচারীদের অগ্নিনির্বাপণ কৌশলের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সব টার্মিনাল, ঘাট, পল্টুন লঞ্চ ও ফেরিকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।

আর নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৌপথ নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব হওয়ায় এখনো যাত্রী সাধারণের প্রথম পছন্দ হচ্ছে নৌপথ। ঈদ উপলক্ষে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত নিরাপদ করার লক্ষ্যে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর কালবৈশাখির মৌসুম হওয়ায় আবহাওয়ার সংকেত অনুযায়ী নৌযান পরিচালনা করার জন্য দপ্তর-সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে, নৌপথের নিরাপত্তা ও যাত্রী সাধারণের দুর্ঘটনা রোধকল্পে নেওয়া ৬২ নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সব নদীবন্দরে বর্তমান ব্যবস্থাপনায় পানীয় জল, পয়ঃনিষ্কাশন, যাত্রীদের নিরাপত্তা, মোবাইল চার্জিং, বেস্ট ফিডিংয়ের ব্যবস্থাসহ শিশু ও মহিলা প্রতিবন্ধীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করা। টার্মিনালগুলোতে সতর্কমূলক বাণী ও নৌবিজ্ঞপ্তি মাইকে প্রচার, ডিসপ্লে মনিটরে প্রদর্শন ও লঞ্চের টেলিভিশন মনিটরে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। লঞ্চের যাত্রীদের অনুমোদিত বেশি ভাড়া আদায় করা যাবে না; নিয়মের ব্যত্যয় হলে মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং শ্রমিক ও যাত্রীদের হয়রানি ও ভীতিমূলক অবস্থা প্রতিরোধ করার জন্য রাতে পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা। এছাড়া রাতের বেলায় স্পিডবোট ও সব ধরনের বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close