নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ জুন, ২০২৪

ডিম আলু পেঁয়াজ সবই চড়া

বাজার পরিস্থিতি আগের মতোই। ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপণ্যের দাম চড়া। প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই বাড়তি। বাজেট প্রস্তাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমার আভাস থাকলেও বাজারে তার প্রভাব এখনো পড়েনি। মূল্যস্ফীতির বাজারে নিম্ন ও মধ্যমণ্ডআয়ের মানুষের যে নাভিশ্বাস, তা প্রশমনের কোনো লক্ষণ নেই।

জাতীয় সংসদে গত বৃহস্পতিবার ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বাজেট প্রস্তাবে বেশকিছু পণ্যে শুল্ক কমানোর ঘোষণা আসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্তত ২৭টি পণ্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। আশা করা হয়, এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে, কমবে দাম।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- চাল, গম, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, রসুন, শুকনা মরিচ, আদা, হলুদ, গুঁড়ো দুধ, চকলেট, মটর, ছোলা, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, সুতা, তুলা এবং সব ধরনের ফল।

বাজেট ঘোষণার পর যেসব পণ্যের দাম বাড়ার আভাস দেওয়া হয়, এরই মধ্যে সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু যেগুলোর দাম কমার আভাস দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কমেনি। রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বরাবরের মতোই নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি।

দেশের বাজারে দাম বাড়তি হওয়ায় ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে কাঁচা মরিচ। তবু দামে কোন প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। মানভেদে কাঁচামরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু কাঁচা মরিচ নয়; চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি, ডিম ও মাংস। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বাজারে দেখা গেছে, বাজারে কাঁচামরিচ কেজিপ্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে যেসব মরিচের মান কিছুটা ভালো, সেই দুই-এক জাতের মরিচ ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৬ মাস বন্ধের পর আমদানি শুরু হওয়ায় দেশের বাজারে মরিচের দাম কমে আসবে বলে মনে করেছিলেন আমদানিকারকরা। তবে আমদানি শুরুর পর উল্টো বেড়েছে দাম।

আমদানিকারকরা জানান, হিলি বন্দর দিয়ে পুনরায় ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। সাধারণত ভারতের বিহার থেকে মরিচ আমদানি করা হয়, কিন্তু আমদানির অনুমতি দেওয়ায় ভারত থেকে মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে বিহারের মোকামগুলো থেকে আমদানি করা হবে। যে দামে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে, তাতে দেশের বাজারে মরিচের দাম ১০০ টাকার মধ্যে থাকবে। তবে আমদানিতে কেজিপ্রতি শুল্ক দিতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। শুল্ক কিছুটা কমানো হলে মানুষ আরো কম দামে কাঁচামরিচ কিনতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কৃষিতেও। মরিচ গাছ ভালো হলেও অত্যধিক খরায় ফলন খুবই কম। মরিচে ফুল এলেও কয়েক দিনে তা ঝরে পড়েছে। মাঝে অনাবৃষ্টির কারণে অনেক জমিতে মরিচ গাছও মরে গেছে। হাতে গোনা কিছু সংখ্যক কৃষক ফলন ভালো পেলেও অধিকাংশ কৃষকই পড়েছেন লোকসানের কবলে। আগের চেয়ে তাপমাত্রা শিথিল হলেও ভারী বর্ষণে মরিচ গাছ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে চাষ করা মচি জলাবদ্ধতার কারণে মারা গেছে।

সবজির বাজারে দেখা গেছে, প্রতিটি সবজির দামও চড়া। বাজারে এখন প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। কাঁকরোল ও বরবটির ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৫০ টাকা। ধনে পাতা ১৫০ টাকা। তবে ধনে পাতা ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে বলে দোকানিরা জানিয়েছেন। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯৫ টাকায়। আদা বা রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকার কমে মিলছে না। আলুর কেজি গত সপ্তাহে ৫০ টাকা থাকলেও তা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ডিমের বাজারে দেখা গেছে, এক হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫২ টাকা। আর তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ টাকা।

এদিকে বাজারে মুরগিও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২১০ টাকা দরে। লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকায়। আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্যদিকে, গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১১০০ টাকায়।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, সারা দেশে ম্যাসেজের মাধ্যমে তারা (তেঁজগাও আড়ত মালিকরা) ডিমের দাম নির্ধারণ করেন। হুট করে দাম কমিয়ে খামারিদের থেকে ডিম নিয়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। এরপর আবার দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা লুটে সিন্ডিকেট।

মাছের বাজারে দেখা গেছে, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়, বড় রুই ৪০০ টাকায়, পাঙাশ ২৩০ টাকা, চিংড়ি আকার ভেদে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, পাবদা ৪০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, চাষের কই ২৮০ টাকায়, কাতলা ৩৫০ টাকায়, গলসা প্রতি কেজি ৫৫০ টাকায়, টেংরা কেজিপ্রতি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি বড় শিং ৫৫০ টাকায়, ছোট শিং ৪০০ টাকায়, বড় বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় ও বড় আইড় মাছ ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close