অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ০৮ জুন, ২০২৪

সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নির্বাচনী ইশতেহারের পরিপন্থি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে সেন্ট্রাল ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

বাজেট পর্যালোচনা সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের তিন নম্বর অধ্যায়ে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ফলে বাজেটে এখন কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তা অবশ্যই সাংঘর্ষিক। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল এবং তাদের যে রাজনৈতিক দর্শন, তার সঙ্গে এটি বিপরীতমূলক। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বড় ধরনের দুষ্টচক্র সৃষ্টি হয়েছে, যারা করখেলাপি ও ঋণখেলাপি হয়ে দেশ থেকে টাকা পাচার করছে। এই দুষ্টচক্রকে প্রতি বছর কিছু সুবিধা দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে টাকাটা আমরা অর্থনীতিতে আনার পথে যাব, নাকি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে যে জিহাদ- সে পথে যাব, তার একটা প্রতিফলন বাজেটে আমরা দেখলাম।

তিনি আরো বলেন, কালো টাকা বা অবৈধ অর্থ নিয়ে আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়, টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে আগে যে অস্পষ্টতা ছিল, অর্থাৎ অন্য কোনো সংস্থা তাদের জবাবদিহিতায় আনতে পারত, এবার সেটাও বাদ দেওয়া হলো। ১৫ শতাংশ কর দিলে তাদের আর কোনো জবাবদিহিতা করতে হবে না। আগে দেখা যেত, এনবিআর থেকে কোনো ছাড় পেলেও দুদক তাদের ধরত। এবার আর সেটা নেই। এই সুবিধা দিলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের টাকা আসে, তেমন কোনো উদাহরণ নেই। আবার এতে একজন সৎ ও নিয়মিত করদাতা নিরুৎসাহিত হবেন। কারণ সৎ ও নিয়মিত করদাতার সর্বোচ্চ করসীমা ৩০ শতাংশ অথচ কালো টাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়েই সাদা বা বৈধ হয়ে যাচ্ছে।

এর আগে বাজেটের ওপর মূল পর্যালোচনা উপস্থাপনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, চলমান অর্থনৈতিক উদ্বেগ মোকাবিলায় যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নেওয়া হয়নি। বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগের যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অতি উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবসম্মত নয়। বাজেটে অর্থনৈতিক সূচকের অনেক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অনুধাবন করতে না পারায় বাজেটে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা দুর্বল ও অপর্যাপ্ত।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাজেটটি হলো। আমাদের প্রত্যাশা ছিল- এই বাজেট অনেক উদ্ভাবনী হবে। এখানে সৃজনশীল ও কিছু সাহসী পদক্ষেপ থাকবে। কারণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। নতুন বাজেট আমাদের কাছে অতীতের বাজেটের মতোই মনে হয়েছে। বর্তমান সময়ের সমস্যা, ক্রান্তিকালীন সংকট দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে, সেগুলো সমাধানে এই বাজেট যথোপযুক্ত পদক্ষেপ বা দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যেখানে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে। যদিও গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটের এ আকার কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close