গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ মে, ২০২৪

ক্রুজ শিপ পোর্ট স্থাপন থমকে আছে

সমুদ্রপথে বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে দেশের অবস্থান তলানিতে * বিমান মন্ত্রণালয়ের চিঠি নৌ মন্ত্রণালয়ের লাল ফিতায় বন্দি

সমুদ্রপথে বিদেশি পর্যটক টানতে ক্রুজ শিপ পোর্ট স্থাপনের কাজ থমকে আছে। প্রায় দেড় বছর আগে এ লক্ষ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। লক্ষ্য আন্তর্জাতিক ক্রুজ শিপ লাইনে বাংলাদেশকে যুক্ত করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দৈন্যতা ও গাফিলতির কারণে এই উদ্যোগ হালে পানি পাচ্ছে না।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, প্রথম চিঠির মতামত না পেয়ে সবশেষ গত এপ্রিলে আরেকটি চিঠি পাঠায় বিমান কর্তৃপক্ষ। এ চিঠির পর টনক নড়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের। পুরোনো চিঠিপত্র নাড়াচাড়া শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমুদ্রপথ ব্যবহার করে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপসহ অনেক দেশ সমুদ্রপথে পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ রেখে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বাড়ছে জিডিপির আকারও। বিশ্বের সঙ্গে দেশের তুলনার চিত্র করলে দাঁড়ায়, বিশ্বের জিডিপিতে ভ্রমণ ও ট্যুরিজমের অবদান ১০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক ট্যুরিজমের প্রায় ৫০ শতাংশ উপকূলীয় ও সমুদ্রকেন্দ্রিক। অন্যদিকে বাংলাদেশের ভ্রমণ ও ট্যুরিজম খাতের অবদান মাত্র ৩ শতাংশ।

বলা হচ্ছে, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও যথাযথ সমন্বিত নীতিমালার অভাবে সমুদ্র ভ্রমণ পর্যটনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদান নেই। বিমান মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে অনুরোধ করা হয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অপার সম্ভাবনাময় এ খাততে বিকশিত করতে হলে আন্তর্জাতিক ক্রুজ শিপ লাইনে যুক্ত হয়ে বিদেশি পর্যটকদের ক্রুজ শিপযোগে বাংলাদেশে আগমন সহজ করা প্রয়োজন। এ কাজটি করার জন্য বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের জাহাজযোগে আগমনের পথ উন্মুক্তকরণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেটি, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সুবিধাসংবলিত এক বা একাধিক ক্রুজ পোর্ট স্থাপন জরুরি।

বিমান মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠির বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিদেশি পর্যটকদের নৌপথে বাংলাদেশ পরিভ্রমণে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি বিমান মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে মতামত দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনি নদীমাতৃক বাংলাদেশের অভিভাবক মন্ত্রণালয় নৌ মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন চিঠির জবাব না পেয়ে নতুন বিমানমন্ত্রী এসে ফের চিঠি পাঠায়। এই চিঠির পর কিছুটা বোধদয় হয় মন্ত্রণালয়ের।

জানা গেছে, সমুদ্র ভ্রমণ পর্যটন বিকাশের লক্ষ্যে এং বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের জাহাজযোগে আগমনের পথ উন্মুক্তকরণের জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে জেটি, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সুবিধাসংবলিত এক বা একাধিক ক্রুজ পোর্ট স্থাপনের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ওপর মতামত জানতে চেয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (টিএ) চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো যেতে পারে মর্মে একটি নথি প্রস্তুত কাজ চলছে মন্ত্রণালয়ে। তবে ক্রুজ শিপ পোর্ট স্থাপনের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

তথ্য বলছে, সমুদ্রপথে পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ দেওয়ার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের মতামত প্রয়োজন রয়েছে। ফলে এটি এককভাবে করা জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও মালদ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজের একাধিক পোর্টসুবিধা রয়েছে। ফলে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রুজ শিপ লাইনে যুক্ত করা সম্ভব নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close