নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ মে, ২০২৪

রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, খাদ্য মজুদ আছে

১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি সব দেশের মতো বাংলাদেশেও হচ্ছে। একই কথা রিজার্ভেও। রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কেননা আপৎকালীন খাদ্য মজুদ রয়েছে। এত বেশি আলোচনার কারণে আজ প্রায় সবাই রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন। এই সতর্কতা দেশের জন্য ভালো। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলের নেতারা। বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ১৪ দলের নেতাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এসেছেন, ভালো হয়েছে। আমি খুশি হয়েছি। সবার কথা শুনব... কীভাবে কী করা যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে আরো সুসংগঠিত হয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কল্যাণ হবে না। গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি; ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে রোজই আন্দোলন, সরকার উৎখাতসহ নানা হুমকি-ধমকি দেয়। যতক্ষণ জনগণ আছে সঙ্গে, ওটা আমি কেয়ার করি না। তারপরও দেশের জ্বালাও পোড়াও, অগ্নিসংযোগ এগুলো যেন না করতে পারে। এগুলো যারা করবে, তাদের কোনো ছাড় নেই... যতই মুরব্বি ধরুক, আর যাই ধরুক। এদের আমরা ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতিনিয়ত বাচ্চা হচ্ছে। তাদের জনসংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। এদিকে, মিয়ানমারেও পরিস্থিতি ভালো নয়। তাদের তো আর ঠেলে দিতে পারি না। আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি। যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়াও করতে যাইনি। কখন যে তাদের ফেরাতে পারব, জানি না। আমরা তো রিফিউজি ছিলাম, তাদের কষ্ট বুঝি। তাদের ভাসানচরে নিচ্ছি। কিছু গেছে, আরো যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাধাগুলো আছে, সেগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছি। গাজায় গণহত্যা চলছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। যেখানেই যাই, এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মারা যাওয়ার ঘটনায় আমরা শোক জানিয়েছি। শোক দিবসও পালন করেছি। যেখানেই মানুষ বিপদে পড়েছে, আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় নীতিতে কাজ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে সমস্যা ইনফ্লুয়েশন। এটা অনেক দেশের সমস্যা। এটা কমাতে পারলে ভালো হতো। রিজার্ভ আমাদের মতো অনেক দেশেরই কমে যাচ্ছে। আমাদের আপৎকালীনের জন্য খাদ্য মজুদ থাকলে রিজার্ভ কম কোনো সমস্যা না। তারপরও আমি এটা নিয়ে সচেতন করায় এখন দেখি সবাই এটা নিয়ে কথা বলছে। এটা ভালো। অন্তত বললে সবাই সচেতন থাকবে। আমি বলেছি, সবাইকে উৎপাদনে মনোযোগী হতে। নিজেদের চাহিদা পূরণে অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে বলেছি। গোপালগঞ্জে আমরা একটা সমিতির মাধ্যমে চাষাবাদ করেছি। সেখানে সবাই এটা করছে। এভাবে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনলে আমাদের খাবারের অভাব হবে না। বরং রপ্তানি করতে পারব। অবশ্য এখনো সবজি-ফুল রপ্তানি হচ্ছে।

বাকস্বাধীনতার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও, টেলিভিশন করে দেওয়ার পরও বলছে, কথা বলতে পারি না। ফেসবুকেও সমালোচনা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেনস। আমরাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এ ব্যাপারে সচেতন যে, কীভাবে এ সমস্যার মোকাবিলা করা যায়।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্কুলে ছেলেদের সংখ্যা কমছে। মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এবার মেয়েরা বেশি পাস করছে, ছেলেরা কম। এর কারণ খুঁজে বের করতে বলেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ফান্ড থেকে আমরা সুবিধা দিচ্ছি। তিনি বলেন, ২২ জেলা ও ৩৩৪ উপজেলা এখন ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত। বাকিগুলোও হবে। প্রত্যেক নাগরিক দুই শতক জমিসহ ঘর পাবে। কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, অভুক্ত থাকবে না। পাশাপাশি নিরক্ষরও থাকবে না। সবাইকে পড়াশোনার আওতায় আনব। বেকারও থাকবে না। কর্মসংস্থানের নানা সুযোগ সৃষ্টি করছি।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, বিএনপির অহমিকা ছিল, তারাই বড় দল। ২০০৮-এর নির্বাচনে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছে, সেটাই তাদের ক্ষোভ। এরপর ২০১৪ সালে তারা নির্বাচনে আসেনি। এরপর থেকে তো বাংলাদেশে নির্বাচনই হতে দেবে না, এমন অবস্থা। হ্যাঁ, কোনো এক সাদা চামড়া থেকে প্রস্তাব এসেছে, বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি করবে। সে সুযোগ দিলে তারা নির্বাচন করতে দেবে। আমি রাজি হইনি। আমি এই প্রস্তাব পাত্তা দিইনি, সোজা কথা। দেশের মানুষ আমাদের শক্তি। আমি তাদের ওপরই নির্ভর করি।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস বিক্রি নিয়ে অনেক দিন দেন-দরবার হয়। আমার একটাই কথা ছিল, দেশের চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত থাকলে বিক্রি করব। অত বড় দেশ, এমন কথা তো সহ্য করবে না, এটাই স্বাভাবিক। বৈঠক হলো... খালেদা জিয়া রাজি হলো গ্যাস বিক্রির। আমি রাজি হইনি। আমি বলেছি, গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে, এমন দৈন্য অবস্থা আমাদের নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাব না। পরে কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পারিনি।

বৈঠকে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতারাও অংশ নেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close