চট্টগ্রাম ব্যুরো
‘আজ আমাদের ঈদের আনন্দ খুশির দিন’
কারো হাতে ফুল, কারো হাতে কেক। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের বরণ করে নিতে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এভাবেই ভিড় করেন পরিবার-স্বজনরা। তাদের মধ্যে সেকি এক অনুভূতি! জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আসা নাবিক ও তাদের পরিবারের লোকজন উভয়পক্ষই অপেক্ষায় ছিল এ মুহূর্তের। এক মাস আগে সোমালিয়ার দস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেলেও এত দিন নাবিকদের দেখা পাননি স্বজনরা। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি আরব আমিরাত ঘুরে চট্টগ্রামে আসার পর প্রথমবার নাবিকদের দেখা পেলেন তাদের স্বজনরা।
জেটি চত্বরে অন্যদের সঙ্গে হাজির ছিলেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদের মা জোছনা বেগম। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ঈদের চেয়ে বেশি আনন্দ হচ্ছে। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। এখন ছেলেকে কাছে পাব, এর চেয়ে আর বড় সুখ কী হতে পারে।’
আগ্রাবাদ সিডিএ ১০ নম্বর থেকে ছেলেকে নিতে আসেন মা জোছনা বেগম। সঙ্গে ছিলেন তানভীরের স্ত্রী রাহা। মা জোছনা আরো বলেন, ‘আজ ছেলের পছন্দের সব খাবার রান্না করেছি। এর মধ্যে আছে গরুর মাংস, মুরগি, কই মাছ, শিমের বিচি। আজ ঈদের আনন্দ। যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া’।
বাবা আসবেন, এজন্য জেটি চত্বরে ছুটে এসেছেন জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের দুই মেয়ে। তারা বলেন, ‘বাবাকে কাছে পাব, এটা ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে। আমাদের আজ অনেক অনেক খুশির দিন।’
জেটি চত্বরে ছিলেন নাবিক আইয়ুব খানের ভাই ওমর ফারুক। তিনি এসেছেন লক্ষ্মীপুর থেকে। তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের জন্য অনেক চিন্তায় ছিলাম। জলদস্যুদের কাছ থেকে কবে মুক্তি পাবে, কবে দেশে আসবে, এর অপেক্ষায় ছিলাম এত দিন ধরে। এখন ভাই দেশে এসেছে, চিন্তা দূর হয়েছে। অনেক খুশি লাগছে। পরিবারের সবার মধ্যে স্বস্তিও এসেছে।’
নাবিকদের বরণ করে নিতে বন্দর জেটিতে ছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, এ সময় কেএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সরওয়ার জাহান রোকন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম।
উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘আমাদের ভাইয়েরা আমাদের কাছে ফিরে এসেছেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। আমরা অনেক খুশি। জিম্মি হওয়ার পর থেকে মুক্তি পাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা- এ পর্যন্ত সব কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
এমভি আবদুল্লাহ বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায়। এদিন তীর থেকে নৌযানে করে সাগরে নোঙর করে রাখা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটিতে উঠে নতুন করে ২৩ জন নাবিক যোগদান করেন। নতুন নাবিকদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকরা। এরপর মুক্ত নাবিকরা কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণিতে করে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছান।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরা। মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল রাতে জাহাজটি মুক্ত করা হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছাল। আরব আমিরাত থেকে রওনা হওয়ার ১৪ দিন এবং জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাসের মাথায় ঘরে ফিরলেন নাবিকরা।
"