গাজীপুর প্রতিনিধি

  ১৩ মে, ২০২৪

তদন্তে কমিটি

ফের হাসপাতালের লিফটে আটকা পড়ে রোগীর মৃত্যু

এবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে প্রায় ৪৫ মিনিট আটকে থাকার পর এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এর আগে ৩ মে একই হাসপাতালের ১২ তলার একটি করিডোরের পাশের ফাঁকাস্থান দিয়ে পড়ে জিল্লুর রহমান নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। নতুন করে লিফটে আটকা পড়ে প্রাণ হারালেন মমতাজ বেগম (৫৩)। তিনি কাপাসিয়া উপজেলার রানিগঞ্জের বাড়িগাঁও গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক শারফুদ্দিনের স্ত্রী।

নিহতের ছেলে আবদুুল মান্নান ও মেয়ে শারমিন জানান, তাদের মা মমতাজ বেগম ভোরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রথমে তাকে হাসপাতালের ১১ তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানানো হয় রোগীর হার্টের সমস্যা রয়েছে। পরমর্শ দেওয়া হয় ৪ তলার কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করার। পরে তাকে ১১ তলা থেকে ৪ তলায় নেওয়ার জন্য লিফটে ওঠানো হয়। লিফট ১০ তলা ও ৯ তলার মাঝামাঝি গিয়ে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আমাদের স্বজনসহ লিফটে ১৪ থেকে ১৫ জন আটকা পড়ে।

মান্নান ও শারমিন জানান, লিফটে কোনো লিফটম্যান ছিল না। লিফটে থাকা ফোন নম্বরে ৩ জন লিফটম্যানকে ফোন করা হয়। তাদের কেউ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সহায়তা না করে বরং খারাপ ব্যবহার করে। তারা আরো বলেন, লিফটে আটকা পরে আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়া হয়। লিফটের ভেতরে থাকা লোকজন রোগী বহনের ট্রলিতে দাঁড়িয়ে লিফটের ওপরের অংশ ফাঁক করে একে একে সবাই লিফট থেকে বেরিয়ে আসি। ততক্ষণে আমাদের মা মারা যান। পরে লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মায়ের লাশ উদ্ধার করে। তারা বলেন, লিফটের ভেতর প্রায় ৪৫ মিনিট আটকা ছিলাম। যথাসময়য়ে লিফটম্যানরা ব্যবস্থা নিলে হয়ত মায়ের মৃত্যু হতো না। তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও লিফটম্যানদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করেন।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুলাহ আল আরেফিন জানান, ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোলরুম থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই লাশসহ তাদের উদ্ধার করা হয়।

এ ব্যাপারে গাজীপুর তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মমতাজ বেগম হার্টের রোগী ছিলেন। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় এবং দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, যাতে কার্ডিওলজি বিভাগের সিসিইউতে চিকিৎসা নিতে পারেন। পরে মেডিসিন বিভাগ হতে ৪ তলায় কার্ডিওলজি বিভাগে নেওয়ার জন্য লিফটে তোলা হয়। এ সময় লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এতে দীর্ঘ সময় লিফট আটকে থাকে। পরে লিফটম্যান ও ফায়ার সার্ভিসের লোক এসে তাদের উদ্ধার করে। লিফটে আটকা সবাই সুস্থ ছিল কিন্তু রোগী মারা গেছেন। বিষয়টি দুঃখজনক। কারও কোনো গাফিলতি আছে কী না সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান করে অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, রোগীমৃত্যুর ঘটনা অধিকতর তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজস্ট্রেট মতিউর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close