নিজস্ব প্রতিবেদক
কুদ্দুস পরিবারের হাতে তছরুপ ২০০ কোটি টাকা
ব্যাখ্যায়ও ভুল তথ্য সোনালী লাইফের
প্রতিদিনের সংবাদে কুদ্দুস পরিবারের হাতে তছরুপ ২০০ কোটি টাকা শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর অভিযুক্তরা তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। তবে তারা প্রতিবেদনের কোনো তথ্যেও প্রতিবাদ করতে পারেনি। বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে স্পষ্টীকরণ করছে বলে দাবি করেছে। গত মঙ্গলবার প্রতিদিনের সংবাদে প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে স্পষ্টীকরণ দিয়ে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা গালিব হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়- সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ওপর একটি অডিট রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অডিট রিপোর্টের ফাইন্ডিংসগুলো প্রকৃতপক্ষে সঠিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটায় না মর্মে আমরা নিশ্চিত। অডিট রিপোর্টটি সাবেক সিইও মীর রাশেদ বিন আমানের সরবরাহ করা মিথ্যা ও অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই মর্মে আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। রাশেদ বিন আমানের অর্থনৈতিক জালিয়াতির পেছনে শুধু বিভিন্ন তথ্য বিকৃতি ও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবই বিকৃতি করেননি বরং কোম্পানির হোস্টাইল টেকওভারের প্ল্যান নিয়ে কাজে নেমেছিলেন।
অডিট রিপোর্টের মধ্যে উল্লেখ্য নেই, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস কত টাকা তার নিজস্ব ভবন ব্যবহার করার জন্য ভাড়া বাবদ সোনালী লাইফের কাছে প্রাপ্য ছিলেন। কোনো বাড়ির মালিক বিনা ভাড়ায় বাড়ি ভাড়া দেবেন না এটাই আইনসম্মত এবং ভাড়া পাওয়ার সম্পূর্ণ আইনগত অধিকার সম্পত্তির মালিকের রয়েছে। কিন্তু রাশেদ বিন আমান এই বাড়ি ভাড়াকে জালিয়াতির মাধ্যমে ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ হিসেবে দেখিয়েছেন। এটা সত্যের অপলাপ। এরকম আরো অনেক সত্যের অপলাপ আছে সংশ্লিষ্ট খবরে, যার ভিত্তি মীর রাশেদ এর তথ্য জালিয়াতি নির্ভর অডিট ফাইন্ডিংস।
সোনালী লাইফ সব স্টেকহোল্ডারের কাছে কোম্পানির হিসাবের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে আরো বলা হয়- একটি সত্যিকারের রিকনসিলিয়েশনের (সমন্বয়) মাধ্যমে কোম্পানির হিসাবপত্রের স্বচ্ছতা এবং সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত করতে তারা সক্ষম এবং সেটা করা হবে। এ সময় শিগগিরই প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার আশ্বাস দিয়ে সোনালী লাইফের সব গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোম্পানির ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানানো হয়।
প্রতিবেদকের বক্তব্য : স্পষ্টীকরণে বলা হয়েছে সাবেক সিইও মীর রাশেদ বিন আমানের মিথ্যা ও অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অডিট রিপোর্ট তৈরি হয়েছে এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। অথচ যতদূর জানা যায়, মীর রাশেদ বিন আমানের করা অভিযোগগুলো ভুল নাকি সঠিক তা যাচাই করার জন্যই অডিটর নিয়োগ দেয় বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। প্রায় তিন মাস ধরে চলা তদন্ত শেষে আইডিআরএতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় অডিট ফার্ম। এক্ষেত্রে কোনো ভুল থাকলে সেটা আইডিআরএ এবং তাদের নিয়োগ করা অডিট ফার্মের ওপরই দায় বর্তায় এবং তাদের যোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ তাদের তথ্য-প্রমাণগুলো প্রকাশ করতে বা অডিটরকে সরবরাহ করতে পারেনি। তারা এই ভুল বা অসত্য তথ্যগুলোর প্রকৃত সত্য কী, তা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং অডিটর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত চাইলে তাদের তথ্য-প্রমাণ না দিয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে সোনালী লাইফের বিরুদ্ধে।
সোনালী কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভবনের ভাড়া বাবদ কত টাকা গোলাম কুদ্দুসের পাওনা তা উল্লেখ করা হয়নি। বরং পাওনা ভাড়াকে ভবন ক্রয়ের অগ্রিম হিসেবে জালিয়াতির মাধ্যমে দেখিয়েছেন মীর রাশেদ বিন আমান। এর ভিত্তিতেই অডিট প্রতিবেদন হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিবেদকের বক্তব্য হলো- ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কত টাকা ভাড়াবাবদ পাওনা ছিল এখানে সেটা মুখ্য বিষয় ছিল না, বরং এই ভাড়া বাবদ কোম্পানির যে বিশাল অঙ্কের টাকা প্রদান করা হয়েছে সেক্ষেত্রে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো পূর্ব অনুমোদন ছিল না। আবার প্রদান করা টাকা যদি ভবন ক্রয় বাবদ অগ্রিম প্রদান না হয়ে ফ্লোর ভাড়ার টাকা হতো সেক্ষেত্রে ভাড়া চুক্তি ও প্রতি মাসের ভাড়া বাবদ মানি রিসিট থাকত। কিন্তু সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ সেসব তথ্য প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছেন। তাছাড়া আইডিআরএর নিয়োগ করা অডিটরকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি সোনালীর পরিচালকরা, যেটি অডিট ফার্ম নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিল। বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চিঠির বক্তব্য অনুসারেই প্রতিবেদক প্রতিবেদনটি করেছেন। তাছাড়া কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি যে জবাব দিয়েছেন তা-ও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
"