শরীয়তপুর প্রতিনিধি

  ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

লঘু পাপে গুরুদণ্ড!

শরীয়তপুরে বিনা টিকিটে পার্কে প্রবেশ করায় পাঁচ শিশুকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় অন্য দর্শনার্থীরা তাদের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে রাখে। গত সোমবার সন্ধ্যায় পৌরসভার শিল্পকলা একাডেমির মাঠ এলাকায় জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রিত শরীয়তপুর পার্কে এ ঘটনা ঘটে। এ যেন লঘু পাপে গুরুদণ্ড।

ভুক্তভোগী শিশু এবং তাদের পরিবারের অভিযোগ, বিনা টিকিটে প্রবেশ করায় তিন ঘণ্টা শিশুদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন পার্কের নিরাপত্তাকর্মীরা। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন শিশুদের এই শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে দুজন গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তাদের আটকে রেখে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর পার্কটি ঈদের দিন চালু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পার্কের দেখভালের দায়িত্বে আছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন। সীমানা প্রাচীর দিয়ে পার্কটির চারপাশ আটকে একটি প্রবেশদ্বার রাখা হয়েছে। এই পার্কে প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা।

গত সোমবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকার হাতিরকান্দি, তুলাসার ও স্বর্নঘোষ এলাকার ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সি কয়েকজন শিশু পার্কের আশপাশে খেলছিল। এ সময় তারা নিরাপত্তা প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমানা প্রাচীর টপকে পার্কে প্রবেশ করে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আটক করে। পরে সেখানে উপস্থিত হয়ে ইউএনও মো. মাইনউদ্দিন চার শিশুকে কানে হাত দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ ওঠে।

পার্কে দায়িত্বে থাকা প্রহরী জাহাঙ্গীর হোসেন বেপারী বলেন, দেয়াল টপকে কিছু ছেলে পার্কে ঢোকে। পরে তাদের ধরে শাস্তি দেওয়ার জন্য পানিতে দাঁড় করে রাখা হয়। তবে কানে ধরার বিষয়টি আমি জানি না।

ভুক্তভোগী এক শিশুর মা আকলিমা বেগম অভিযোগ করেন, আমার পোলার কাছে টাকা ছিল না। টাকা না থাকায় ওরা কয়েকজন মিলে পার্কের দেয়ালে বসে দেখতেছিল। একসময় ওরা পার্কে ঢুকে যায়। পরে আনসার আর ইউএনও স্যার ওদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে। আনসাররা ওদের বন্দুক দেখাইয়া ভয় দেখাইছে। এ ঘটনার পর আমার পোলায় এখন ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে চাচ্ছে না।

শাস্তির শিকার এক শিশু বলেন, আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। আমার সঙ্গে থাকা অনেকে ভেতরে ঢুকছে। তাই আমিও ওদের সঙ্গে ঢুকছি। পরে আনসাররা মিলে আমাকে সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আটকে রাখছে। ইউএনও এসে আমাকে কান ধরে রাখতে বলছে আর পার্ক বন্ধ হওয়া পর্যন্ত আটকে রাখতে বলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন বলেন, কয়েকজন দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকলে গ্রাম পুলিশ ও দায়িত্বরত যারা ছিলেন তারা ওদের ধরে আটকে রাখে। আমি গিয়ে কাউন্সিলিং করে ছেড়ে দেই। ওরা দুই একজন হয়তো ভয়ে কানে হাত দিয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close