প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ল যুদ্ধের শঙ্কা

সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার দুই সপ্তাহ পর ইসরায়েলে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। গত শনিবার থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়ে এ হামলা চালনো হয়। যদিও আগে থেকেই ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি থাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। তবে পাল্টা হামলার বিষয়ে ইসরায়েল বলেছে, ইরানকে চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে এবং আমরা সঠিক উপায়ে এর জবাব দেব। ইরান-ইসরায়েলের এই পাল্টা-পাল্টিতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ আশঙ্কার আঁচ লেগেছে জাতিসংঘেও। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি গত রবিবার বিকেলে শুরু হয়। এতে নিজ নিজ দেশের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন জাতিসংঘে ইসরায়েল ও ইরানের রাষ্ট্রদূতরা। খবর আলজাজিরা, দ্য স্ট্রেট টাইমস।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শনিবারের হামলার মধ্য দিয়ে ইরান ইসরায়েলকে দেখিয়ে দিয়েছে তারা সরাসরি হামলা চালাতে পারে। এ হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও ইসরায়েলের উদ্বেগ বাড়বে।

এদিকে, হামলার পর প্রতিক্রিয়া কী হবে তা ঠিক করতে বৈঠক করে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। যদিও বৈঠকটি কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। তবে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, খুব শিগগিরই এই বৈঠক আবার শুরু হবে।

ইসরায়েলি মন্ত্রী বেনি গান্তজ জানিয়েছেন, ইসরায়েল ইরানকে জবাব দেবে তবে অবশ্যই অতি দ্রুত নয়। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ইরানের মুখোমুখি হতে আমরা একটি আঞ্চলিক জোট গড়ে তুলব। ইরানকে চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে এবং আমরা সঠিক উপায়ে এর জবাব দেব। খেলা এখনো শেষ হয়নি।

তবে ইসরায়েলের মিত্রশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও দেশটিকে সতর্ক করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পাল্টা হামলায় যোগ দেবে না।

গত রবিবার বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে খুব সাবধানে এবং কৌশলগতভাবে চিন্তা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে পাল্টা-হামলায় গেলে হিজবুল্লাহ’সহ ইরানের প্রক্সিরা তাতে জড়িয়ে পড়বে; এতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই গ্রাস করবে যুদ্ধের আগুন।

র‌্যান্ডস প্রজেক্ট এয়ার ফোর্সের কৌশল এবং পরামর্শ কর্মসূচিবিষয়ক পরিচালক কোহেন বলেন, ইসরায়েল আগে থেকেই মনে করে ইরানের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ চলছে। কারণ তারা বিশ্বাস করে গাজায় হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, তহবিল জোগানো ও অস্ত্রশস্ত্র দেয় ইরান। শনিবারের হামলার মধ্য দিয়ে ইরান ইসরায়েলকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা সরাসরি হামলা চালাতে পারে। এ হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও ইসরায়েলের উদ্বেগ বাড়বে।

আলজাজিরার কূটনীতিক সম্পাদক জেমস বেইস মনে করেন, দামেস্কে কনস্যুলেটে হামলার পর এখন পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে, তাতে একটি চক্র পূর্ণ হয়েছে। এ চক্র শেষ হওয়ার পরে নতুন করে হামলার ঘটনা ঘটলে অর্থাৎ ইসরায়েল যদি আবারও হামলা চালায় তাতে বিপদ নেমে আসবে।

এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি বলেছেন, জেরুজালেম থাকবে মুসলিমদের হাতে এবং মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে।

গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ভিডিও প্রচার করে হিব্রু ভাষায় কথাগুলো বলেন আয়াতুল্লাহ আল খামেনি।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য খাদের কিনারে। এ অঞ্চলের মানুষ একটি পূর্ণমাত্রার ধ্বংসাত্মক সংঘাতের মুখোমুখি। তারা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এখনই সময় তাদের খাদের কিনার থেকে ফিরিয়ে আনার। আর এ দায়িত্ব যৌথভাবে সবার। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি সভার শুরুতে দেওয়া ভাষণে গুতেরেস এ কথা বলেন। স্থানীয় সময় গত রবিবার বিকেলে ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের হামলা নিয়ে এ সভা শুরু হয়। এতে নিজ নিজ দেশের অবস্থানের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েল ও ইরানের রাষ্ট্রদূতরা।

গুতেরেস বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দিকের বড় বড় সামরিক পক্ষগুলো সংঘাতে জড়িয়ে যেতে পারে, এমন যেকোনো পদক্ষেপ উপেক্ষা করা জরুরি। এরই মধ্যে এখানকার বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের (গাজাবাসী) চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। তাই এখনই সময়, সবাইকে যুদ্ধের কিনার থেকে ফিরে আনার।

সবার যৌথ অংশগ্রহণে এখনই গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রয়োজন উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, সেখানে মানবিক অবস্থা বিপর্যস্ত। এ জন্য সব জিম্মিকে নিঃশর্ত মুক্তি ও বাধাহীনভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দেওয়া দরকার।

ইসরায়েলের দূত গিলাদ আরডান ইরানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই হামলার মধ্য দিয়ে মুখোশ খুলে গেছে তাদের। ইরান হলো বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী তৎপরতার মদদদাতা। এই অঞ্চল ও বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে তাদের সত্যিকার চেহারা বেরিয়ে এসেছে। এ সময় তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানান।

আরডান নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়ে অনেক দেরি হওয়ার আগেই সম্ভাব্য সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানান।

বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি বলেন, ইরান আত্মরক্ষার সহজাত অধিকার চর্চা করছে। নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আত্মরক্ষায় সাড়া দেওয়া ছাড়া ইরানের সামনে আর কোনো উপায় ছিল না।

ইরাভানি জানান, যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটুক তা ইরান চায় না। তবে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার দেশ সাড়া দেবেই। সময় এসেছে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব পালন করার, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকিকে মোকাবিলা করার। পরিষদকে অবশ্যই গাজা উপত্যকায় গণহত্যা বন্ধে জরুরি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close