চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

দুবাইয়ের পথে এমভি আবদুল্লাহ, পাহারায় স্পেন-ইতালি

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা জাতীয় পতাকা নিয়ে জাহাজের ডেকে উল্লাসে মেতেছেন। তাদের পাশে রয়েছেন স্প্যানিশ নৌবাহিনীর নৌসেনারা। বর্তমানে এমভি আবদুল্লাহকে নিরাপত্তা দিয়ে দুবাইয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ইতালিয়ান নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ।

গত রবিবার দুপুর ১২টায় জাহাজের মালিক কোম্পানি কেএসআরএমের আগ্রাবাদের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আনা হচ্ছে। জাহাজটি আগামী ১৯-২০ এপ্রিল দুবাই পৌঁছাবে। এরপর জাহাজটিকে সরাসরি চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হবে। তবে মুক্তিপণের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। শাহরিয়ার জাহান বলেন, ‘জাহাজে জলদস্যু ছিল ৬৫ জন। শনিবার মধ্যরাতে বোটে করে তারা চলে যায়। জাহাজটি এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসছে। দুবাইয়ে নোঙর করার পর জাহাজের নাবিকরা ফ্লাইটে বা জাহাজে যেভাবে ইচ্ছা দেশে ফিরতে পারবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিদেশি যুদ্ধজাহাজ ফোর্সফুলি জাহাজটি উদ্ধারে যেতে চেয়েছিল। আমাদের সরকার কুইক রেসপন্স করেছে। সাংবাদিকরা সহযোগিতা করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএমের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, ‘জাহাজ দখলে নেওয়ার পর আমরা লোকেশন ট্রেস করতে থাকি। যোগাযোগ শুরুর পর প্রতিদিনই কথা হচ্ছিল। নাবিকরা কেমন আছে, কত তাড়াতাড়ি দস্যুরা জাহাজ ছেড়ে যাবে ইত্যাদি কথা হতো।’ তিনি আরো জানান, ‘দুদিন আগে আমাদের দাবি ছিল, তাই প্রত্যেক নাবিকের ভিডিও নিয়েছি। মুক্তিপণের প্রতিটি কাজ আইনগতভাবে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে। কত ডলার সে বিষয়টি আমরা নানা কারণে বলতে পারছি না। ইউএসএ, ইউকে, সোমালিয়া, কেনিয়ার নিয়ম মানতে হয়েছে।’

মেহেরুল করিম বলেন, আগে অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে দ্রুত মুক্তি পেয়েছে এমভি আবদুল্লাহ। ১৩ বছর আগে আমাদের আরেকটি জাহাজ জাহান মনি জিম্মি হয়। তখন আমাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে জাহাজটি মুক্ত করতে সময় লেগেছিল। তবে তখনকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা দ্রুত এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত করতে পেরেছি। জাহাজটি জিম্মি হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিনিয়ত সেটির পজিশন ট্র্যাক করতাম। কোথা থেকে কোথায় নেওয়া হচ্ছে, তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করতাম। জিম্মির কয়েকদিন পর জলদস্যুদের একজন যিনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন, তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এরপর আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনে আমরাও আমাদের দিক থেকে যোগাযোগ শুরু করি। এভাবে টানা মাসখানেকের যোগাযোগের সফলতায়ই মুক্ত হয় এমভি আবদুল্লাহ।

এদিকে জাহাজের মালিকপক্ষ মুক্তিপণ নিয়ে কথা না বললেও সোমালিয়ার এক জলদস্যু সেই তথ্য প্রকাশ করেছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি অর্থাৎ ৫৪ কোটি ৭৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা) মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জাহাজের সব নাবিককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জলদস্যু আব্দিরাশিদ ইউসুফ বলেন, ‘দুই রাত আগে আমাদের কাছে অর্থ আনা হয়। সেগুলো জাল কি না, তা আমরা যাচাই করে দেখেছি। এরপর আমরা সেগুলো ভাগ করে নিয়ে সরকারি বাহিনী এড়িয়ে চলে যাই।’

এ বিষয়ে সোমালিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেননি বলে জানায় রয়টার্স। এর আগে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিপণ সংক্রান্ত যে সংবাদ ও ছবি প্রচার করা হচ্ছে, তা সত্য নয়। ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ সমঝোতার মাধ্যমেই নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের ফিরে আসতে ১৫ থেকে ২০ দিন লাগতে পারে।’ প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এরপর তারা মুক্তিপণ দাবি করেন। বিষয়টি মালিকপক্ষ সরাসরি স্বীকার না করলেও মুক্তিপণ দিয়েই জাহাজটিকে মুক্ত করেছে তারা। ১৪ বছর আগে একই মালিকের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণিকেও একইভাবে মুক্ত করে কেএসআরএম গ্রুপ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close