আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

নতুন মুসল্লিদের ভালোবাসায় আগলে রাখি

সংশোধনের মাস রমজান। পরিবর্তনেরও। এই ধ্রুব সত্যের প্রমাণ আমাদের চোখের সামনেই। এই যে মসজিদগুলো এখন মুসল্লিতে পরিপূর্ণ। নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকারে মুখরিত মসজিদের অন্দর, আঙিনা। পবিত্র এই দৃশ্য রমজানের আগে চোখে পড়ে না। নিঃসন্দেহে এটি মাহে রমজানের বরকত। রমজানের অঢেল রহমতেই মৃতপ্রায় দিল তাজা হয়ে উঠেছে। তারা ফিরে এসেছে সিরাতুল মোস্তাকিমে। পেয়েছে রবের কুদরতি পায়ে লুটিয়ে পড়ার তাওফিক। এই সৌভাগ্যবান বান্দাদের হাতে হাত মিলিয়েছি কি? তাদের বুকে টেনে নেওয়া কি উচিত নয়? বরং আমরা তাদের ‘নতুন মুসল্লি’ বলে উপহাস করছি। আমাদের এই কটূক্তি, বিদ্রুপের কারণেই রমজান শেষে মসজিদে মুসল্লি থাকে না। আমাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কারণেই তারা মসজিদ ছেড়ে দেয়। নামাজ ছেড়ে দেয়। নেক আমল ছেড়ে দেয়। পুরোনো সেই পাপের জগতে ফিরে যায়। তাদের এই হারিয়ে যাওয়ার জন্যে আমরাই দায়ী। আমরা তাদের ‘নতুন মুসল্লি’ ট্যাগ লাগিয়ে কটূক্তি করি। ইবাদত থেকে নিরুৎসাহিত করি। এটা অনেক বড় জুলুম। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আর তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পরে? যে আল্লাহর ঘরে তার নাম স্মরণ করা থেকে মানুষকে বাধা দেয়...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১১৪)

এই নতুন মুসল্লিরা হয়তো নামাজের নিয়মকানুন জানেন না। জানেন না মসজিদের আদবও। তাই টুকটাক ভুল করে ফেলেন। এই জন্যে তাদের হাসির পাত্র না বানাই। তাদের দূরে ঠেলে না দিই। বরং আপনজনের মতো ভালোবাসি। স্নেহ-মমতায়, দরদ নিয়ে দীনের সবক দিই। এই কাজের জন্যেই তো আমরা শ্রেষ্ঠ জাতি। আশরাফুল মাখলুকাত। প্রতি রমজানে মসজিদে মসজিদে মুসল্লির ঢল নামে। আবার রমজান শেষ হতেই মুসল্লি কমে যায়। এই কমে যাওয়া আমাদের গাফিলতির জন্যে নয় তো? আমরা তাদের মায়া-মমতায় কাছে টানতে পারিনি। ভালোবাসায় আগলে রাখতে পারিনি। সে জন্যেই তো তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ বছরও যেন এমনটি না হয়। হারিয়ে না যায় আমাদের এই নবীন মুসল্লিরা। সেজন্যে আমাদের এখনই যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। ইমাম মুয়াজ্জিনদের এ ব্যাপারে বেশি ভাবতে হবে। অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তেমনি আমরা যারা সমঝদার মুসল্লি, অন্তরে দীনের দরদ পুষি, তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন ইসলামিক সভা-সেমিনার করা যেতে পারে। সেসব সভা-সেমিনারে তাদের পুরস্কৃত করে আগ্রহী করানো যাবে। ব্যাপারটা বাচ্চাদের মতো মনে হলেও হাস্যকর নয়। কেন না, এই মুসল্লিদের অধিকাংশই কিশোর ও যুবক। আর প্রবীণ যারা আছেন, দীন বিষয়ে তারাও শিশুসুলভ। যে দীনের কিছুই জানে না। ঠিকমতো সিজদা দিতে জানে না। তাকে আর কী বলা যেতে পারে? সবচেয়ে বড় কথা, এই অবুঝ মানুষগুলো কিন্তু আমাদেরই ভাই-বন্ধু। প্রতিবেশী, আপনজন। আমরা তো একই নবীর উম্মত। আমরা তো তাদের ভুলের সাগরে রেখে আসতে পারি না। আমাদের আপনজনদের জাহান্নামে ঠেলে দিতে পারি না। আমরা তাদের ভালোবেসে বুকে টেনে নেব। ভুল হলে শুধরে দেব। তারা রমজানে যেমন মসজিদে এসেছে, আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছে, রমজানের পরেও যেন তাদের এই নেকির সিলসিলা অব্যাহত থাকে, তার ফিকির করব। তাদের নিয়েই জান্নাতের অনাবিল সুখ-শান্তি ভোগ করব। নবীজি (সা.) তো বলেছেনই, ‘মানুষ যাকে ভালোবাসবে, সে তারই সঙ্গী হবে।’ (বোখারি, হাদিস ৬২৬৮)

লেখক : প্রাবন্ধিক, খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close