নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ মার্চ, ২০২৪

ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

রোজায় পণ্য মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর হোন

* অগ্নিনির্বাপণ, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে * কিশোর গ্যাং ধরতে হবে গোড়া থেকে * ফসলি জমি রক্ষা করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে রমজান সামনে রেখে যেকোনো ধরনের খাদ্য মজুদ ও ভেজালের বিরুদ্ধেও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না তা সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, দেশের অন্যস্থানেও এটি অনুসরণ করতে হবে। গতকাল রবিবার তার কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চার দিনের বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্থাপনা নির্মাণে যেন বিল্ডিং কোড মেনে করা হয় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু যেখানে সিটি করপোরেশন আছে সেখানেই নয়, সর্বজনীনভাবে প্রত্যেক জায়গাতেই এই বিষয়টা মানতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেই ভবন নির্মাণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে দ্রুত ছুটে যাওয়ায় এবং জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় ঢাকা জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। তিন ফসলি আবাদি জমি, বাড়িঘর বা শিল্প-কারখানাসহ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না মর্মে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ফসলি জমিকে রক্ষা করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দেশের উন্নয়ন করছে, পাশাপাশি দেশের মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করা দরকার। রমজান মাস আসছে। এ সময় কিছু ব্যবসায়ী সব সময় মজুদদারি করেন, পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চান। সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এ ছাড়া সরবরাহ নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুদদারি করেন। পণ্য পচিয়ে ফেলবেন, তবু বাজারে ছাড়বেন না। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সরকারপ্রধান খাদ্যে ভেজাল দেওয়া প্রতিরোধেও জেলা প্রশাসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোজা এলেই এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এগুলোর দিকেও নজর দেওয়া একান্তভাবে দরকার।

সমাজে কিশোর গ্যাং সমস্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে এবং পড়াশোনা করবে সে সময় এ সমস্যাটা দেখা দেয়। এ জন্য এলাকাভিত্তিক নজরদারি বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কারো ছেলেমেয়ে যেন এ ধরনের কিশোর গ্যাং, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য প্রতিটি পরিবারকে নিজের সন্তানদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে।

প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবারগুলোকে একটু সচেতন করতে হবে, শুধু গ্রেপ্তার করে বা ধরে লাভ নেই। সে ক্ষেত্রে সেখানে থাকা বড় অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে এরা আরো বড় কোনো ধরনের অপরাধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। সে কারণে গোড়া থেকেই আমাদের ধরতে হবে এবং পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছে। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তিনি ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে জাতির পিতার ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরে সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সেবায় আরো আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সেবা করাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাদের সেবা করতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই সব কাজ আমাদের হাতে নিতে হবে এবং সম্পন্ন করতে হবে।’ এ কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যও তিনি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তাকে ভোট দিয়ে পুনরায় সরকার পরিচালনায় সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাবাহিতা অব্যাহত রাখার সুযোগ দেওয়ার জন্য আবারও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ১৯৭৫ সালের পর যে নির্বাচনগুলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং অংশ নিয়েছি, তার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবচেয়ে সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এ জন্য মাঠপর্যায়ের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ জানাই।’

‘সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছি তার মানে এই নয় যে ক্ষমতাকে শুধু ভোগ করতে এসেছি। আমি আমার বাবার মতোই বলতে চাই- আমি জনগণের সেবক। জনগণকে সেবা দিতে এবং তাদের জন্য কাজ করতে এসেছি। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের পতাকা, আমাদের স্বাধীনতা। এ কথা আমাদের ভুললে চলবে না।’

সরকারের উন্নয়নকাজে ‘পরশ্রীকাতরতায়’ ভোগে জনগণের সামনে সরকারের অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ নিয়ে মিডিয়ার বিভিন্ন টকশোতে বিকৃতভাবে উপস্থাপনেরও সমালোচনা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। যেখান থেকে সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে এনেছে এবং ২০২৬ সাল থেকে সে যাত্রা শুরু হবে। তখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে সুবিধাগুলো আমরা পাব, সেটা যেমন আমরা কাজে লাগাব, তার সঙ্গে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে, সেগুলো মোকাবিলা করার প্রস্তুতি আমাদের এখন থেকে নিতে হবে।’

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের ডিসি আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও গাইবান্ধার ডিসি কাজী নাহিদ রসুল। অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ভাবন, সেবা এবং সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close