রাঙামাটি প্রতিনিধি

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পাহাড়ের বুকে সড়ক

* দলমত-নির্বিশেষে নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক নির্মাণ শুরু * ১৮ কিমি সড়ক নির্মাণে ৫ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে * সড়ক না থাকায় কৃষকের পণ্য জমিতেই পচে

সড়ক না থাকায় নৌপথে চলাচল করতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যায়। তখন না হেঁটে, না নৌকায়- কোনোভাবেই সহজে জেলা শহরে যেতে পারেন না। এতে মানুষ পড়েন ভোগান্তিতে। সড়কে ভোগান্তি দূর করতে এলাকার মানুষ ছুটেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি তাদের ভাগ্যে। উপায় না পেয়ে নিজেদের কষ্ট নিজেরাই দূর করার উদ্যোগ নেন। দলমত-নির্বিশেষে নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক নির্মাণ শুরু করেন। ১৮ কিলোমিটার সড়ক হলেই জেলা শহরের সঙ্গে সড়কপথে যাতায়াত করতে পারেন লংগদু উপজেলার ৫ লাখ মানুষ। এর মধ্য দিয়ে ৫২ বছরের কষ্ট দূর করেন উপজেলাবাসী।

দুর্ভোগ লাঘবে সব ভেদাভেদ ভুলে এ উদ্যোগে যোগ দিয়েছেন দলমত-নির্বিশেষে উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। পুরো উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। তাদের এ মহতি উদ্যোগে শুরু হয়েছে লংগদু-নানিয়াচর সড়কের নির্মাণকাজ। যে সড়ক দিয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করবেন। এত বছরেও যা হয়নি, নিজস্ব অর্থায়নে রাস্তা নির্মাণে এগিয়ে এসে তাই করে দেখালেন তারা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, লংগদু উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা নেই। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌপথ। এতে শুষ্ক মৌসুমে বাড়ে জনদুর্ভোগ। দুর্ভোগ লাঘবে নিজেদের উদ্যোগে শুরু হলো লংগদু-নানিয়ারচর সড়কের মাটিকাটার কাজ। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন। সড়কের কাজ শেষ হলে জেলা শহরের সঙ্গে লংগদু ছাড়াও বাঘাইছড়ি ও সাজেকের যাতায়াত সহজ হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে মাটিকাটা চলছে। তৈরি হচ্ছে নতুন সড়ক। এ দৃশ্য দেখে এলাকাবাসীর মন ভালো হয়ে যায়। গত মঙ্গলবার লংগদু উপজেলার জামতলায় সড়ক নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য আসমা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু, আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অজয় কুমার চাকমা মিত্র, মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল, লংগদু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিক্রম চাকমা বলি, বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বশর প্রমুখ।

চেয়ারম্যানরা বলেন, মাত্র ১৮ কিলোমিটার সড়ক না থাকায় লংগদু উপজেলার ৫ লাখ মানুষকে দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে নৌপথে জেলা শহরের সঙ্গে যাতায়াত করতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে উপজেলাবাসী। যাতায়াতব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে এখানে উৎপাদিত কৃষিপণ্য জমিতেই পচে নষ্ট হয়। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। শেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক তৈরির উদ্যোগ নেন। এ কাজে যন্ত্রপাতি এবং জনবল দিয়ে সহায়তা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা।

মাইনীমুখ বাজার এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস শেষে হ্রদের পানি শুকিয়ে যায়। তখন জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযাগ বন্ধ হয়ে যায় উপজেলাবাসীর। এ অবস্থায় দীঘিনালা উপজেলা হয়ে শহরে যেতে হয়। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। এ সড়ক হলে শহরের সঙ্গে সারা বছর যোগাযোগ থাকবে এবং সময় ও অর্থ বাঁচবে।

মাইনীমুখ ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহিদ উদ্দিন বলেন, জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় কৃষিপণ্য ঠিকমতো বাজারজাত করতে না পারায় জমিতেই পচে নষ্ট হয়। নানিয়ারচর সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হলে শাকসবজি ও কৃষিপণ্য সরাসরি জেলা শহরে নিয়ে বিক্রি সহজ হবে। কৃষক ন্যায্যমূল্যে পাবেন। আমাদের ভোগান্তি দূর হবে।

মাইনীমুখ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমরা ধরে নিয়েছিলাম আর কাজ হবে না। এজন্য নিজেরাই সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিই। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী সবার প্রচেষ্টায় সড়কের কাজ শুরু করেছি আমরা।

লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলেন, অনেকে আশ্বাস দিলেও এত বছরেও কেউ সড়ক নির্মাণ করেনি। বাধ্য হয়ে লংগদুর ৭ ইউপির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক নির্মাণের কাজটি শুরু করেছি আমরা। তিনি বলেন, ২০ লাখ এরই মধ্যে ব্যবস্থা হয়ে গেছে। বাকি টাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। আশা করছি, আগামী মাসের মধ্যে মাটিকাটা শেষ হবে। সড়ক হয়ে গেলে ছোট ও মাঝারি যানবাহন চলাচল করতে পারবে। বড় যানবাহন চলাচল করতে হলে পাকা করা লাগবে সড়কটি। আপাতত কাঁচা সড়ক দিয়েই আমরা যাতায়াত করব।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, এলাকাবাসীর কাজটি প্রশংসার দাবিদার। আমরা চেষ্টা করেও কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে এটিকে আমরা প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এখন সড়ক বিভাগ থেকে যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজে সহায়তা করছি। কাজটি দেখভালও করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close