নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চাঁদাবাজিতে অসহায় ব্যবসায়ী-চালকরা

ঢাকা-রাজশাহী পথে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজিতে বিরক্ত ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এই চাঁদাবাজির কারণে তাদের কষ্টের কথা। ট্রাকচালক বোরহান উদ্দিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘রাজশাহীর আমচত্বর (নওদাপাড়া) এলাকা দিয়েই ৩ জেলার পণ্য ঢাকায় আসে। শুরুতে আমচত্বরে দিতে হয় ১০০ টাকা। এরপর যদি গাড়ি কুষ্টিয়া দিয়ে ঢোকে তাহলে কুষ্টিয়ার বারোমাইল এলাকায় ১০০ টাকা দিতে হয়। সিরাজগঞ্জ দিয়ে ঢুকলে সেখানে দিতে হয় ১০০ টাকা। ঢাকায় ঢোকার পর ডেমরায় ২০০ টাকা দিয়ে রশিদ নিতে হয়। আর যাত্রাবাড়ীয় এলাকায় ঢুকলেই জোর করে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। আর না দিতে চাইলে গলায় ছুরি ধরে। ত্রিপল কেটে মাল বের করে নেয়। সর্বশেষ ঢাকার যেই বাজারেই মাল আনলোড করি না কেন দিতে হয় ২০০ থেকে বাজারভেদে ৫০০ টাকা। সবমিলিয়ে প্রতিটি টিপের জন্য ৫ হাজার টাকা সর্বনিম্ন চাঁদাবাজদের জন্য রাখতে হয়।’

আরেক চালক জাহিদ হাসান। ড্রাইভার ও হেলপারের জীবন পার করছেন ৮ বছর। প্রতিদিনের সংবাদকে চাঁদাবাজির ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, ‘এক ট্রাকে সবজি ধরে ওজন হিসেবে ১৪ থেকে ১৫ টন। ভাড়া প্রায় ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা। আগে রাজশাহী থেকে গাড়ি বের করতেই ৫০০ টাকা লাগত। আমচত্বর ১০০ টাকা, বেলপুকুর ১০০ টাকা, বানেশ্বর ১০০ টাকা, নাটোর পোঁছার আগে ঝলমলিয়া বাজারে দিতে হতো ১০০ টাকা। আর যদি গাড়ি নওগাঁ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকা যেত তাহলে নওগাঁর ফেরিঘাট থেকে রাজশাহীর আমচত্বরের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার। এই পথে ১৫০ টাকা চাঁদা দিতে হতো। নওহাটা ১০০ টাকা ও ফেরিঘাট ৫০ টাকা। তবে এসব চাঁদা আদায় অনেকটা বন্ধ হয়েছে। এখন ঢাকার ৩ জায়গার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ আমরা। যাত্রাবাড়ী, সাভার ও গুলিস্তানের চাঁদাবাজি বন্ধ হলেই অনেক জিনিসের দাম কমে আসবে। রাজশাহীর সবজি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, আমরা আগে ১৫ হাজারের নিচে সবজি ঢাকার বাজার নিয়ে যেতে পারতাম। এখন সেই ভাড়া ২০ হাজার ঠেকেছে। যদি পদে পদে গাড়ির মালিক বা ড্রাইভারকে চাঁদাবাজির টাকা দিতে না হতো তাহলে অনেকটা রক্ষা পেতাম আমরা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে এই চাঁদাবাজির টাকা আমাদের থেকে উসুল করা হচ্ছে। আমাদের লাভ কমে গেছে। যারা কারওয়ান বাজারে ঢাকিতে সবজি বিক্রি করছে তারাই বেশি লাভ করে। চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের সোচ্চার হওয়া দরকার। মিডিয়ায় খবর দেখছি সরকার নেমেছে। দেখা যাক বন্ধ হয় কিনা।

রাজশাহীর পবার পারিলা এলাকার মাছ ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন বলেন, আমি ঢাকায় মাছ পাঠাই দীর্ঘদিন ধরে। আগে যে ভাড়া দিয়েছি বর্তমানে তা বিভিন্ন কারণে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেড়ে গেছে। ধরেন, পুকুর থেকে ২৪০ টাকা রুই বিক্রির জন্য ঢাকায় নিতে নিতে ২৮০ টাকা কেজি পড়ে যায়। ৩০০ টাকা কেজির নিচে মাছ কীভাবে বিক্রি করবে ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া মাছের উৎপাদন মূল্য বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি তেলের দাম বাড়া, শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সব প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর।

রাজধানীর প্রবেশ মুখগুলোর অন্যতম আবদুল্লাহপুর এলাকা। এই এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে কাঁচামালবাহী ট্রাক থেকে নেওয়া হয় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। টাকা না দিলেই কাঁচামালবাহী এসব ট্রাককে করে রাখা হয় অবরুদ্ধ। এছাড়াও আবদুল্লাহপুর এলাকার বিভিন্ন কাঁচামালের পাইকারি হাটে কাঁচামালবাহী ট্রাক প্রবেশে দিতে হয় চাঁদা। এসব চাঁদার টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায় স্থানীয় বেশকিছু প্রভাবশালী মহল। আবদুল্লাপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থিত কাঁচামালের আড়তের কাছে গতকাল বিকেলে ট্রাকচালক হামিদুল হক নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল নামাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাস্তায় ট্রাকে মালামাল নিয়ে বের হলেই টাকা দিতে হয়। কখনো নেতার চেলারা টাকা নেয়, কখনো ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল দিয়ে কাগজপত্র চেক দেওয়ার বাহানায় হয়রানি করে পরে কিছু টাকা দিলে ছেড়ে দেয়। দিনাজপুর থেকে এই আবদুল্লাহপুর আসতে পথেই এই চাঁদা দিতে খরচ হয় ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা।

আরেক ট্রাকচালক শামিম বলেন, গাজীপুর, আবদুল্লাহপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন আড়তে মালামাল নিয়ে প্রবেশ করতে গেলেই গুনতে হয় টাকা। ১০০ থেকে ৩০০ টাকা তাদের দিতে হয়। না দিলে মালামাল নিয়ে আড়তে প্রবেশ করতে দেয় না। শাকিল হোসেন রংপুর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজিবাহী ট্রাক নিয়ে গাজীপুরের বাসন থানাধীন কাঁচামালের আড়তে প্রবেশ করার পথে গতকাল তিনি বলেন, সামনে সিরিয়াল আছে তাই পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। কেন এই অপেক্ষা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনের গাড়িগুলো থেকে টাকা নিচ্ছে রিসিট দিচ্ছে। সেজন্য অপেক্ষায় আছি। এই রিসিট তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ না করলে ট্রাক ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তাই বাধ্য হয়েই তাদের কাছ থেকে রিসিট সংগ্রহ করতে হয়। গাড়ি বেঁধে ১ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় চাঁদা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close