নিজস্ব প্রতিবেদক
সংসদে প্রধানমন্ত্রী
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে ‘লাগাম টানা’ সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। গতকাল বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী; বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক, বিধবা ও স্বামীর দ্বারা নিগৃহীত নারীসহ নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের কষ্ট লাঘবে আমরা সবসময় সচেষ্ট। সরকার নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। বিশ্ববাজারে কয়েকটি পণ্য; যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। তবে মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন শুল্কছাড় দেওয়া হচ্ছে।
ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে মোবাইলকোর্টসহ প্রত্যেকটা এলাকা পরিদর্শন ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপরও যদি কেউ এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আমি একটা কথা বলি, রমজান তো কৃচ্ছ্রসাধনের মাস। সে সময় কেন যেন আমাদের খাওয়াটা একটু বেড়েই যায়। আসলে সেজন্য তো রমজান না, রমজান হচ্ছে সংযমের মাস, আমাদের সংযম করতে হবে। এখন বিশেষ কোনো একটা জিনিস না খেলেই রোজা আর হবে না, রোজা রাখা যাবে না বা ইফতার হবে না- এ মানসিকতা বদলাতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, আগামী রোজায় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার অভিপ্রায়ে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত জোগানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে ভারত সরকারের কাছ ১ লাখ টন চিনি এবং ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিম্নআয়ের মানুষের নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ২৫ স্পটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সুলভমূল্যে দুধ, মাংস ও ডিম বিক্রির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পবিত্র রমজান উপলক্ষে আমদানি সংশ্লিষ্ট শুল্ক স্টেশনগুলো ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও খেজুর দ্রুত খালাসকরণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, অসাধু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে খাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে প্রতিটি মিলের পাক্ষিক মিলিং ক্ষমতা ধানের ক্ষেত্রে পাঁচগুণ থেকে কমিয়ে তিনগুণ করা হয়েছে। মজুদ রাখার এ বিধান সংশোধন করায় বাজারে ধানের সরবরাহ বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে এবং অবৈধ মজুদ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। দুর্নীতি দমনে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। স্বতন্ত্র সংসদ সংসদ সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ ও শাস্তির মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি মূলোৎপাটন করা হবে।
"