নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপন

জনপ্রতিনিধিদের সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার দিকে বিশেষ নজর দিতে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাদক থেকে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়। আমাদের সমাজ এর থেকে মুক্তি লাভ করুক। আমরা চাই যে, জনপ্রতিনিধিরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ যত্নবান হবেন।’ গত রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আয়োজিত স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৪ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সবাইকে বলব- ২০০৯ সাল থেকে আমরা সরকারে আছি। আজকে বাংলাদেশের একটি ধাপ উত্তরণ ঘটেছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এটা যেন পিছিয়ে না যায়। সেদিকে লক্ষ রেখেই আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব এবং জনসেবা আপনারা করে যাবেন। আমরা যেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় কথা- সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করে সমাজকে গড়ে তুলতে হবে। সেদিকে আপনাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ এ মাদকের একটি বিরূপ প্রভাব রয়েছে। এ থেকেই আবার দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়। এগুলো থেকে যেন আমাদের সমাজ রক্ষা পায়, সেদিকে বিশেষ যত্নবান হয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে আপনারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটাই আমরা চাই।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি মনে করি, আগামী দিনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। একটা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় সরকার। কাজেই স্থানীয় সরকার হবে সবচেয়ে শক্তিশালী। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে আমরা ব্যবস্থা করে দেব, কিন্তু স্থানীয় সরকার স্থানীয়ভাবেই দেশের উন্নয়ন করবে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব। জাতির পিতা যে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কারো কাছে মাথা নিচু করে নয়, মাথা উঁচু করে আমরা চলব। আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলব।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, প্রতিটি স্কুলের উন্নয়ন, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। বিভাগগুলোয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করছি, বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে শিক্ষার মান আমরা উন্নয়ন করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৯৭১ সালের লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এ স্বাধীনতার সুফল প্রতি মানুষের ঘরে পৌঁছাব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেটা আমরা করতে পারব তখনই, যদি সক্রিয়ভাবে আপনারা কাজ করেন এবং মানুষের সেবা করেন, তখনই এটা করা সম্ভব। সরকারপ্রধান বলেন, ৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আমাদের ফ্রিল্যান্সার আছে, অনলাইনে কেনাবেচা হচ্ছে, বাণিজ্য চলছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি করে দিয়েছি, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে, সবদিক থেকেই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। আর যে কাজগুলো করে দিই, সেটা রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্ন আপনাদেরই করতে হবে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, শরীয়তপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেদুর রহমান খোকা শিকদার, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন আহমেদ লাবলু, পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদ লাবলুও স্থানীয় সরকার সংস্থার বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের পক্ষে বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার চলে জনগণের পয়সায়। এ অর্থ জনগণের, সেটা মাথায় রাখতে হবে। সরকার কাজটা করে দেয়, কিন্তু জিনিসটা তো জনগণের। এ কথা মাথায় রেখেই যত্ন করতে হবে। কাজেই, আপনারা সেভাবে এগিয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ, আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) যেমন আমরা অর্জন করব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এমন একটি দেশ আমরা গড়ে তুলব, যেখানে দক্ষ জনশক্তি থাকবে, দক্ষ সরকার হবে, দক্ষ্য অর্থনীতি এবং দক্ষ সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে। জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাত মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আমরা এরই মধ্যে ‘ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। তাছাড়া আমাদের জলাভূমিগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং সেগুলো যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গ্রাম নিয়ে বেশি চিন্তা করেন। শহরগুলোয় আমাদের যেমন স্যুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে, তেমনি তিনি চান প্রতিটি গ্রামপর্যায়ে এভাবে মাস্টারপ্ল্যান করেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই স্বাস্থ্যকরভাবে মানুষ বাঁচতে পারবে। যারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, তাদেরই কিন্তু জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সরকারপ্রধান বলেন, জনগণের প্রতিনিধিদের জন্য সব থেকে বড় কথা হলো, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা। সেটা মাথায় রেখেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণের প্রতি তাদের জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close