অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গরুর মাংস এক লাফে ৮০০ আরো বাড়ার শঙ্কা

দুই দিন আগেও প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৬৮০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। কিন্তু শবেবরাত উপলক্ষে তা হঠাৎ বেড়ে ৮০০ টাকা কেজি দাঁড়ায়। কোথাও কোথাও ৮৫০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা যায়। বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। দায়ী করছেন প্রশাসনের উদাসিনতাকেও। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

রাজধানীর নাখালপাড়া এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বাদল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কয়েক মাস আগে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে ব্যবসায়ী খলিল মিয়া মাত্র ৫৯৫ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন। এরপর অনেকেই তাকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত না পেরে গরুর দাম পুনর্নির্ধারণে বৈঠক করে ব্যবসায়ীরা। সে সময় প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ হলেও তা কেউ মানেনি। এরপরও আমরা একটা স্বস্তি পেয়েছিলাম যে দামের একটা ফ্রেম নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন যে হারে দাম বাড়ছে তাতে গরুর মাংস আমাদের জন্য ফের স্বপ্নের খাবারে পরিণত হবে।

ক্রেতারা বলছেন, গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ফলে সরকার চাইলেই তাদের দমন করতে পারছে না। এর আগে খিলগাঁওয়ের খলিলুর রহমানের পাশাপাশি লালমাটিয়ার আরেক মাংস ব্যবসায়ীকে হত্যাসহ সন্তানকে অপহরণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হুমকিদাতারা ধরা পড়ে।

হঠাৎ দাম বৃদ্ধি নিয়ে মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে গরুর মাংসের দাম প্রতি পিসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে। তাই মাংসেরও দাম বেড়েছে। কিন্তু বিষয়টি মানতে নারাজ ভোক্তা সাধারণ। মতিঝিল এলাকার খাবার হোটেল ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, আমাদের খাবার হোটেলে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কিন্তু যেভাবে হঠাৎ করে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে তাতে আমরা বিপাকে পড়ছি। এগুলো পেছনে ব্যবসায়ীদের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তাদের কেন ধরা হয় না?

বনশ্রীর এ ব্লকে গরুর মাংস বিক্রি করেন স্বপন মিয়া। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি অনেক দিন থেকেই ৭৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করেছি। তবে শুনেছি গত ২ দিন ধরে অনেকে ৮০০ টাকা বিক্রি করছে। গরুর মাংস আমি দুইভাবে বিক্রি করি। একটা হলো হাড়, তেল ও মাংসের সমন্বয়ে। এর কেজি ৭৫০ টাকা। এছাড়া আরেকটি আছে সেখানে শুধু মাংস দেওয়া হয়। এর কেজি ১ হাজার ৫০ টাকা। হঠাৎ দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, গরুর দাম বেড়েছে হাত বদলের কারণে, বেপারিরা বিক্রি করছে না। কোরবানির জন্য রেখে দিচ্ছে।

হঠাৎ দাম বৃদ্ধির বিষয়ে একই কথা বলেন, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মর্তুজা মন্টু। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গরুর দাম বেড়েছে। প্রতি পিস গরুতে দাম বেড়েছে ১২-১৫ হাজার টাকা। খামারিরা কোরবানির জন্য গরু রেখে দিচ্ছে। বেশি দাম ছাড়া বিক্রি করছে না। তাদের ভাব এমন নিলে নেন, না নিলে নাই।

তিনি বলেন, শবেবরাতের দিন ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করে আমার ১১ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তবে আজ আবার ৩ হাজার টাকা লাভ হয়েছে, কারণ দুজন কর্মচারী আসেনি তাই। এখন আমার যে লোকসান হলো এটা কে দেবে?

গরুর মাংসের দাম কেউ নির্ধারণ করে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, সামনের দিনে দাম আরো বাড়বে। তবে ব্যবসায়ীদের ডেকে আমি বলব যেন ৮০০ টাকার বেশি দাম না বাড়ায়। রমজানে মাংসের দাম আমি ৮০০ টাকার বেশি বাড়তে দেব না। এরপরও হয়তো কারো একটু লাভ হবে, একটু লোকসান হবে। এরপরও এর বেশি দাম বাড়তে দেব না।

তবে কোরবানি জন্য গরু মজুদ করছে এমন অভিযোগকে মাংস ব্যবসায়ীদের কৌশল বলছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ ইমরান। তিনি বলেন, চাল-আটার মতো গরু মজুদ করে রাখা যায় না। কারণ রেখে দিলে প্রতিদিনই এর খরচ আছে। তাছাড়া খামারিরা বাছুর কিনে থাকে, জবাই করার গরু না। যদি বেশি দামে খামারিরা বিক্রি করে তাহলে তো প্রান্তিক খামারি বা কৃষকদের বেশি দাম পাওয়ার কথা। কিন্তু তারা তো বেশি দাম পাচ্ছে না। মূলত এটা মাংস ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানো একটা কৌশল।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু যৌক্তিক দর কত হওয়া উচিত তা নির্ধারণের দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের। তারা দর নির্ধারণ করে দিলে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে ভোক্তা অধিদপ্তর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close