রুহুল আমিন রিপন, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শোষণের থাবা

৯০ হাজারে দৈনিক সুদ ৯০০ টাকা

কথায় বলে প্রয়োজন কোনো ওজর-আপত্তি মানে না। সংসারের দরকারে ৯০ হাজার টাকার প্রয়োজন হয় দিনমজুর সাত্তার মিয়ার। এ টাকা তিনি সুদে ধার নেন এলাকার দাদন কারবারি নূরু মিয়ার কাছ থেকে। কঠিন শর্ত- ৯০ হাজার টাকার দৈনিক সুদ দিতে হবে ৯০০ টাকা। নুরু মিয়া দৈনিক এ হারেই সুদ দিতে বাধ্য করেছেন তার খাতককে। এভাবে গত ৬ মাসে ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে গরিব সাত্তার মিয়ার কাছ থেকে। তবুও লোভের আগুন নেভেনি নুরু মিয়ার, ভয়ংকর শোষণের থাবা থেকে মুক্তি পাননি সাত্তার মিয়া। শেষে নুরু মিয়ার দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় মাফ চান দিনমজুর সাত্তার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বাজারের ঘরে আটকে রেখে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন মহাজন নুরু মিয়া ও তার ছেলে আনিস। এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা হওয়ায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

‘আমি গরিব মানুষ আমি আর টেহাপয়সা দিতারতাম না, আল্লারস্তে আমারে মাফ কইরা দেন। আপনার দুইডা পাও ধইরা কই আমারে মাফ কইরা দেন।’ সুদসহ আসল টাকা পরিশোধ করার পরও সুদের কারবারি মো. নুরু মিয়া দিনমজুর সাত্তারের ওপর চাপিয়ে দেয় চড়া সুদের বোঝা। সেই টাকা দিতে না পেরে এভাবে আকুতি করার পরও মিলেনি মুক্তি। এ সুদের টাকাকে কেন্দ্র করে সাত্তার মিয়াকে দাদন কারবারি নুরু মিয়া তার নিজ বাড়িতে এনে অপমান করেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিনমজুর সাত্তার বাজারে যায়। বাজারে যাওয়ার পর নূরু মিয়া তার সুদের কারবারি পরিচালনা করার চেম্বারে সাত্তারকে ডেকে নেয়। তারপর সাত্তার মিয়াকে আটকে রেখে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর করেন নুরু মিয়া ও তার ছেলে আনিস মিয়া। এ ঘটনার খবর পেয়ে সাত্তারের পরিবারের লোকজন এসে মারধরে বাঁধা দিলে তাদেরকেও মারধর করে নূরু মিয়া ও তার ছেলে। এসময় সাত্তারের চিৎকার শুনে বাজারের লোকজন সাত্তারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নূরু মিয়ার ছেলে মো. আনিস মিয়াকে আটক করে। এসময় পালিয়ে যায় নূরু মিয়া। এ ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের সুটিয়া বাজারে। এ ঘটনায় আবদুস সাত্তারের স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে নূরু মিয়াসহ তিনজনের নামে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। নুরু মিয়া একই ইউনিয়নের বাশাটি গ্রামের দানেশ মিয়ার ছেলে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, ৬ মাস আগে নুরু মিয়ার কাছ থেকে সাত্তার মিয়া ৯০,০০০/- (নব্বই হাজার) টাকা ধার নেন। নব্বই হাজারে সুদ হিসেবে দৈনিক ৯০০ টাকা লাভ নিতেন নূরু মিয়া। এভাবে সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সাত্তার মিয়া এখন নিঃস্ব। এভাবে আসল নব্বই হাজার ও সুদ যুক্ত করে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকাসহ ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা আদায় করে নূরু মিয়া। তারপরও সাত্তারের কাছে আরো সুদের টাকা দাবি করলে দিনমজুর সাত্তার নিরুপায় হয়ে ক্ষমা চান। কিন্তু দাদন কারবারি নূরু মিয়া সহৃয় হননি। সাত্তারকে ডেকে এনে অবরুদ্ধ করে টাকার জন্য এলোপাতাড়ি মারপিট করেন।

ভুক্তভোগী আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। অভাবে পরে সুদে টাকা আইন্যা লাভসহ পরিশোধ করার পরও আমাকে আরো টাকা দিতে চাপ দেয়। কিন্তু আর টাকা দিতে পারব না তাই আমি নুরু চাচার পাও ধরে মাফ চাইছি, তবুও তিনি ক্ষমা করেনি। আমাকে বাঁশের লাডি দিয়া বাইড়াইয়্যা ও এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মাইরা আহত করেছে। আমি এই অত্যাচারের বিচার চাই।

এ বিষয়ে তথ্য জানার জন্য এলাকায় সুদের কারবারি মো. নূরু মিয়ার মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে এক সুদের কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close