নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট রাজধানীতে

রাজধানীর অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়ানো ব্যাটারিচালিত রিকশা ‘বিপজ্জনক’ বলে অনেকে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। যদিও কেউ আবার বলছেন, পায়েচালিত রিকশার চেয়ে এগুলো ভালো, ছোটা যায় দূরের গন্তব্যে, সময়ও লাগে কম। তবে গতি বাড়লেও এসব রিকশার ব্রেক বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেনি। অনেক সময় লক্কড়-ঝক্কড় কাঠামো আর নড়বড়ে ব্রেকের এ বাহনগুলো পড়ছে দুর্ঘটনায়। আবার যে সড়কে চলাচলই নিষিদ্ধ, সেসব সড়কেও সোজা কিংবা উল্টোপথে চলছে এগুলো।

ঢাকার ট্রাফিক পুলিশ বলছে, আইনানুযায়ী এগুলোর চলাচল বন্ধে কাজ করছে পুলিশ। তবে ‘মানবিকতার খাতিরেও’ কখনো কখনো ছাড় দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে চালক-মালিকরা বলছেন, মানবিকতা নয়, টাকা ছাড়া কেউ কোনো ছাড় দেয় না। সড়ক থেকে নিয়মিত অবৈধ রিকশা উচ্ছেদে অভিযান চালানোর কথা তুলে ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো অবৈধ হলেও ঢাকায় চলছে, এ সত্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আপনারা জানেন, এ বিষয়ে হাইকোর্টের রুলও আছে। কিন্তু আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। প্রধান হচ্ছে জনবল সংকট। আপনারা দেখবেন, আমাদের লোক শহরের ইন্টারসেকশনকেন্দ্রিক মোতায়েন থাকে, সেটাও বড় বড় সড়কগুলোয় শুধু। প্রতিটি অলিগলিতে কিন্তু আমরা লোক দিতে পারি না। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।

এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ট্রাফিকের প্রতিটি বিভাগে নির্দেশনা দেওয়া আছে, যখনই কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা যাবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ বাহনগুলোকে ডাম্পিং করছি। প্রতিদিন গড়ে ১০০টির বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে আমরা একটু সংবেদনশীল থাকি। এটা আপনাদের একটু জেনে রাখা দরকার। অনেক সময় দেখা যায়, কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে হয়। যেমন মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে যখন হাসপাতালে যান কেউ, একজন মা যখন সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নামাতে যান অথবা একটা ওষুধের দোকানের সামনে যখন একজন রোগী রিকশা নিয়ে নামেন এবং সেগুলো যদি কোনো ট্রাফিক ইস্যু তৈরি না করে, সেসব ক্ষেত্রে মানবিক থাকার জন্য বলেছি আমরা।

২ কোটির বেশি মানুষের ঢাকা মহানগরে রাস্তার পরিমাণ যে অপ্রতুল, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে মুনিবুর রহমান বলেন, আছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ, থাকার কথা ২৫ শতাংশ। মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থাসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কিন্তু আমাদের আইনগত কাজগুলো চালিয়ে নিতে হয়। পুলিশ বলছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের নাম করে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার অনুমোদন নিয়ে পরবর্তী সময়ে এগুলো রাস্তায় নামানো হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়ার দাবিতে বনানী ১১ নম্বর সড়ক প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরোধ করেন চালকরা। সেখানে ক্র্যাচ হাতে কয়েকজনকে দেখা যায়। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আবদুল মোমেন বলেন, সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে দেওয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিচয়ে ওইসব রিকশা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এগুলো চালাচ্ছেন সুস্থ ব্যক্তিরাই। আবার পুলিশ এসব রিকশা আটকে আইনগত পদক্ষেপ নিতে গেলে তারা একজন কার্ডধারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকেই পাঠাচ্ছেন।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কিছু বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান-বনানী সোসাইটি ওই রিকশাগুলোকে চলতে না দেওয়ার বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানিয়েছে। এরপর সোসাইটির সহায়তায় গত তিন সপ্তাহ ধরে তাদের আর প্রধান সড়কগুলোয় উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। গত এক বছরের মধ্যে মিরপুর, ডেমরা, গাবতলী, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন, পুলিশ বক্সে হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন রিকশা চালকরা। সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি একই দাবিতে ধানমন্ডিতে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা ও ভাঙচুর চালান রিকশাচালকরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close