শাদমান হাফিজ শুভ, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট)

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

আক্কেলপুরে বিরল পাখি ‘নীল কপালি গির্দি’

নীল কপালি গির্দি সাধারণত চোখে পড়ে না। ২০১৬ সালে মৌলভীবাজারের একটি এলাকায় দেখা যায়। আক্কেলপুরে পৌর শহরের হাস্তাবসন্তপুর আবাসন এলাকার পূর্বদিকে হাঁড়িপুকুরপাড়ে গত শনিবার নীল কপালি গির্দির দেখা মেলে। আক্কেলপুরের উদীয়মান আলোকচিত্রী আহনাফ আল সাদমানের ক্যামেরায় পাখিটি বন্দি হয়। তিনি শখের বশে ছবিটি তুলেছিলেন। পরে এ খবরে ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পেশাদার আলোকচিত্রীরা ওই এলাকায় এসে নীল কপালি গির্দি পাখির ছবি তুলে নিয়ে যান।

‘নীল কপালি গির্দি’ বিরল প্রজাতির পাখি। পাখিটির মাথা, কপাল, গলা গাঢ় নীল। গলার নিচ থেকে বুক-পেট পর্যন্ত কমলা রঙের। ডানার পালক এবং লেজ কালচে। লম্বায় সাধারণত ১৫ সেমি, ওজন ১৭ গ্রাম। পাখিটির দেহের নিচের অংশ কমলা ও বাদামি রংয়ের। কোমর ও পেট কমলা এবং লাল। লেজের কিনারা কালচে। চোখের চারদিকে রয়েছে সাদা বলয়। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাখিটির এদেশে নীল-লাল গির্দি ব্লু-ফ্রন্টেড রেডস্টার্ট বা নীল কপালি গির্দি নামে পরিচিত। পাখিটি এদেশে বিরল। এটি এদেশে অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি হিসেবে বিবেচিত। এরা মুসসিক্যাপিডই পরিবারভুক্ত, বৈজ্ঞানিক নাম ফোনিকুরাস ফ্রন্টেলিস।

আরো জানা গেছে, পাখিটি শীত মৌসুমে বিভিন্ন ঝোপঝাড়, মাঠঘাট, পুকুরপাড় ও খোলা বনাঞ্চল এলাকায় বিচরণ করে। মূলত পোকামাকড় রসালো ফল ও বীজ খেয়ে জীবন ধারণ করে। একাকী বিচরণ করলেও প্রজননের পর ও পরিযায়নের সময় ছোট দলে বিভক্ত হতে দেখা যায়। সাধারণত মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। জমির আইল, দুই পাথরের ফাঁক বা গাছের খোঁড়লে মস বা শেওলা দিয়ে ছোট্ট বাটি আকারের বাসা বানায়। বাসা বানাতে গাছের ছোট্ট শিকড়, চুল, পালক ইত্যাদি ব্যবহার করে। স্ত্রী গির্দি ৩ বা ৪টি হালকা গোলাপি-ধূসর বা হালকা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। যার ওপর থাকে হালকা লালচে দাগ।

আলোকচিত্রী আহনাফ আল সাদমান বলেন, ‘শখের বশেই পাখিটির ছবি তুলেছিলাম। সেদিন বিকেলে আমি আর আনিস শেখ ভাই পাখির ছবি তোলার জন্য ঘুরতে বের হই। গ্রামের হাঁড়িপুকুরপাড়ে একটা জঙ্গলে এর দেখা পাই। প্রথমে কালা গির্দি ভেবে ছবি তুলেছিলাম। পরে বাসায় এসে মাথার নীল অংশ দেখে সন্দেহ জেগেছিল। পরে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি এটা অতি দুর্লভ নীল কপালি গির্দি। পরে বার্ড ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এটিই দুর্লভ নীল কপালী গির্দি পাখি বলে নিশ্চিত হয়েছি।’ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘শীতকালে এ পাখি এদেশে আসে। এদের সচরাচর দেখা যায় না। পাখি অতিথি পাখি বলেই মনে হচ্ছে।’

খবর পেয়ে পাখিটির ছবি তুলতে আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, আমি বন্যপ্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ গবেষগা নিয়ে কাজ করি। বিরল প্রজাতির নীল কপালি গির্দি পাখিটি ২০১০ সালে ঢাকায় দেখেছিলাম। এদের আবাসস্থল ভারতের দার্জিলিং, মধ্যচীন, হিমালয়ের পাদদেশের এলাকা, নেপাল এবং ভুটান। ২০১৮ সালে ভুটানে গিয়ে এ পাখির ছবি তুলেছি। কিছুটা ভবঘুরে জীবনযাপন করে থাকে বলেও জানান তিনি। বন অধিদপ্তরের পাখিবিদ শিবলী সাদিক বলেন, বাংলাদেশে এ পাখিটি বিরল। ওই এলাকায় পাখিটির প্রথম দেখা পাওয়ার খবর আমিও পেয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close