নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের পেছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান আছে

সাগরে তেল-গ্যাস উত্তোলনে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আহ্বান

ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি, সেখানেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান রয়েছে। আজ মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি, আমরা যে স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি, তার সবকিছুতেই অবদান রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ, বাঙালি আজ আমরা বিশ্বের বুকে যে আত্মপরিচয় পেয়েছি, সেটা দিয়ে গেছেন মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি, সেখানেও বঙ্গবন্ধুর অবদান রয়েছে। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন তমদ্দুন মজলিস এবং আরো কয়েকটি সংগঠন নিয়ে। তার আগে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে করাচিতে শিক্ষা সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানান। এর মধ্য দিয়েই ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আইন বিভাগের ছাত্র থাকাকালে পূর্ব বাংলা ছাত্রলীগ গঠন করেন।

ছাত্র সংগঠন গঠন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রামের প্রস্তুতি নেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন যেসব রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন ছিল, তাদের নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন- ১১ মার্চ ধর্মঘট ডাকা হবে। অর্থাৎ আমরা যে আজ মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি, আমরা যে স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি; উপমহাদেশে ভাষাভিত্তিক একমাত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ, সেই জাতি রাষ্ট্র আমরা পেয়েছি, তার সবকিছুতেই অবদান রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুর রাজ্জাক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. নুরুল হুদা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।

এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট-১৯৭৪’ আইন প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক থাকব এবং আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ অনুসরণ করে সমুদ্রপথে ব্যবসা ও বাণিজ্য চালিয়ে যাব। আমরা ২০১২ এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি করেছি। ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট-১৯৭৪’ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এ ক্রমধারা বজায় থাকবে বলে আমি মনে করি। আওয়ামী লীগ সরকার অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমুদ্র বিজয় করে এবং আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগর হচ্ছে ভারত মহাসাগরের একটা অংশ। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চল দিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান। ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশগুলো বাংলাদেশ এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ- একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে এ অঞ্চলটা কিন্তু খুব নিরাপদ। এখানে কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই এবং সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ অঞ্চলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ। এ সামুদ্রিক পথ আমাদের সব দেশ সমানভাবে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলছে। কোনোরকম দ্বন্দ্ব এ অঞ্চলে তৈরি হয়নি। আমরা সবসময় এটাই চাইব, আমাদের এ অঞ্চলকে ঘিরে যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে, সেটা যেন কখনো সংঘাতপূর্ণ না হয় বা এখানে কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়। এটা যেভাবে শান্তিপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ হিসেবে চলমান রয়েছে, সেভাবেই যেন সামনের দিনগুলোয়ও চলমান থাকে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০৪১ সাল নাগাদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তার সরকারের দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশিদেরও এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন। পরে বিআইসিসিতে মেরিটাইম স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামুদ্রিকবিষয়ক ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম। এছাড়া নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close