নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সর্বস্তরে মায়ের ভাষা একুশের আশা

গৌরব আর শোকের একুশ আলোয় ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করল জাতি। মায়ের শেখানো বুলিকে সাত দশক আগে যারা এনে দিয়েছিলেন রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা, বাঙালির ইতিহাসের গৌরবের সেই অধ্যায় স্মরণে এবারও ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনারের বেদি। গতকাল বুধবার ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের দিন মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে। এদিন সর্বস্তরের মানুষের কণ্ঠেই এক আহ্বান, বিদেশি ভাষার দাপটে যেন রক্তের বিনিময়ে পাওয়া ভাষা ম্লান না হয়ে যায়, অফিস-আদালত বা সব ক্ষেত্রে যেন চলে বাংলা, যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে নিজেদের ভাষার মর্যাদা।

অন্য বছরের মতো এবারও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের স্মৃতির চরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সেই আহ্বান জানালেন একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা। ‘জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন’-এর ব্যানারে এসেছিলেন তারা। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিদেশিরাও। ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পর আক্ষেপ করে তারা বললেন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সাত দশকেও দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন এখনো ঘটেনি। ‘বিনে স্বদেশি ভাষা মিটে কি আশা?’- রামনিধি গুপ্তের এই চরণই যেন তাদের অভিব্যক্তি।

সংগঠনটির সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কাদের বাবুল বলেন, ভাষাই তো আমাদের স্বাধীনতা এনে দিল। স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল ভাষা আন্দোলন। ১৯৭১ এর আগে আমরা কতটা অবহেলিত ছিলাম, সেটা ভাষা আন্দোলন প্রমাণ করে। আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। রক্ত দিয়ে সেই ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছিল।

তারা বলেন, বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের গর্ব হয়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পরও দেশের সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন না হওয়া দুঃখজনক। এখনো আমাদের সর্বোচ্চ আদালতে ইংরেজিতে অধিকাংশ রায় হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে শুরু করে সাইনবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন ও বিজ্ঞাপন সবখানেই ইংরেজির দাপট। তাহলে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হলো কেন?

সাপ্তাহিক ‘একাত্তরের গেরিলা’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজকে আমাদের জন্য একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার দিন। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাঙালিকে আত্মহুতি দিতে হয়েছে। আজকে এটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের।

তিনি বলেন, কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আমরা বাংলা ভাষাকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারিনি। এখনো সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। তরুণ প্রজন্ম মনেপ্রাণে মাতৃভাষাকে লালন করতে পারছে না। মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিশ্বের নয়টা দেশে আমি ঘুরেছি। আমি দেখেছি, মাতৃভাষাকে তারা অনেক সম্মান করেন। তারা সর্ব ক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে উপস্থাপন করা চেষ্টা করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের সন্তানদের নিয়ে শহীদ মিনারে আসেন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশন থেকে আসা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলে, আমাদের বাংলা বইয়ে এই লালবৃত্তের শহীদ মিনারটা দেখেছি। ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, জব্বারের নাম পড়েছি। আজকে এখানে এসে ফুল দিতে পেরে ভালো লাগছে।

বাবার সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসেছিল আজিমপুর ওয়েস্টার্ন হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিউল বাসেত নিয়ন। নিয়ন বলে, টিভিতে শহীদ মিনার আর ভাষা শহীদদের কথা জেনে এখানে আসতে খুবই আগ্রহী ছিলাম। বাবা তাই নিয়ে এসেছে।

নিয়নের বাবা আবদুল বাসেত খোকন বলেন, আমরা যে ভাষায় কথা বলি, এ ভাষাটা কীভাবে আসল, কত কষ্টের বিনিময়ে এ ভাষাকে আমরা পেয়েছি, এটা জানানোর জন্য ছেলেকে নিয়ে এসেছি। যাতে মায়ের ভাষার প্রতি তার মমতাবোধ থাকে এবং ভাষা সম্পর্কে আরো উৎসাহী হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close