নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত শিগগিরই

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু এবং কক্সবাজারের উখিয়ায় মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন চলছে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনা, সীমান্তরক্ষী, বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ফেরত পাঠানোর কাজ। শিগগিরই তাদের ফেরত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এদিকে নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রটি বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্যাম্প ছেড়ে রাখাইনে যাওয়া এবং পরে অস্ত্রসহ ফিরে আসা ২৩ রোহিঙ্গার মধ্যে ২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শিগগিরই ফেরত পাঠাতে পারবেন বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তবে তাদের কবে নাগাদ ফেরত পাঠানো হবে, সেই দিনক্ষণ প্রকাশ করতে রাজি হননি মন্ত্রী। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে সংঘাতের সময় যারা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। মিয়ানমার তাদের নিয়ে যাবে। আমি দিনক্ষণ বলতে চাই না। কারণ এটা গোপনীয়। এটাতে নিরাপত্তার বিষয় জড়িত আছে। তবে খুব সহসা মিয়ানমার তাদের ফেরত নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব সহসা তাদের ফেরত পাঠাতে পারব।

মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ বাংলাদেশে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতার প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, কখন কোন জাহাজ ভিড়বে, সেটা আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বলতে পারি না। এটা টেকনিক্যাল পার্ট বা এটা বলার প্রয়োজন আছে বলেও আমি মনে করি না। মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেখুন, আমরা এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছি। তাদের অভ্যন্তরীয় বিষয়ে এখানে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক, সেটা আমরা চাই না। আমাদের এখানে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই, সেটাও বলার সুযোগ নেই। আমাদের এখানে মর্টার শেল এসে পড়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেটার কড়া প্রতিবাদ আমরা জানিয়েছি।

চলমান সংঘাতের ফলে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যের সঙ্গে দেশটির সেনাসদস্য বাংলাদেশে এসেছে। এসব সেনাসদস্যের কেউ কেউ ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নিধনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে তদন্তে দাবি উঠছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে ড. হাছান বলেন, দেখুন, আমরা আপাতত তাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে কাজ করছি। কারণ আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে, তাদের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো। আর তারাও নিয়ে যেতে চায়। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। রাখাইনের রাজধানী সিত্তের বাংলাদেশ মিশন থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মিশনে যারা কর্মরত আছে, তাদের নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

অন্যদিকে মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশের ক্যাম্প ছেড়ে রাখাইনে যাওয়া এবং পরে অস্ত্রসহ ফিরে আসা ২৩ রোহিঙ্গার মধ্যে ২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা শুনানি শেষে প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়ার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাছির উদ্দিন মজুমদার জানান। গ্রেপ্তারের পর কারাগারে থাকা মো. সাদেক নামে এক রোহিঙ্গা অসুস্থ হওয়ায় তার রিমান্ডের অনুমতি দেননি বিচারক। সংঘাতের মধ্যে বিদ্রোহীদের তাড়া খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে ৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বিজিপি সদস্যদের পাশাপাশি ২৩ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। পরে ৯ ফেব্রয়ারি বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের পালংখালী বিওপির নায়েব সুবেদার মো. শহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করে তাদের ১২টি অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

এর আগে শনিবার কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ওই ২৩ রোহিঙ্গাকে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। বিচারক ফাহমিদা সাত্তার আবেদন আমলে নিয়ে রবিবার শুনানির দিন ঠিক করে দেন। এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্ত পরিদর্শনে যান। সেখানে সীমান্তের লোকজন ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনে যান।

বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল বলেন, সীমান্তের চলমান পরিস্থিতিতে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রটি পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর ঘুমধুমের দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা হবে। বিদ্রোহীরা সীমান্ত চৌকি দখল করে নেওয়ায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের ৩২৫ সদস্য গত সপ্তাহে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে ঢোকেন। তাদের একটি অংশকে নিরস্ত্র করে বিজিবি হেফাজতে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের একটি ভবনে রাখা হয়। এসব কারণে ওই বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়ে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিদল কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে বিকল্প কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close