reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সাক্ষাৎকার

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই কৃষির অগ্রযাত্রা

কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে দেশের কৃষি, শিক্ষা ও কৃষি খাত নিয়ে কথা বলেছেন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (কেআইবি) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. আবদুল্লাহ

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছেন। এ পদক্ষেপে কৃষি সেক্টরে কি প্রভাব পড়ছে?

উত্তর : এদেশের কৃষি সবসময় অবহেলিত ছিল। আমরা কৃষিতে এগিয়ে যাই- পাকিস্তান তো বটেই, এটা ব্রিটিশরাও চায়নি। তারা ধানের বদলে নীল, পাট, চা চাষ করাত। ব্রিটিশ শাসনামলে কোনো কৃষি গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সত্যিকার অর্থে এদেশে কৃষির অগ্রগতি শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়েই প্রথম শুরু হয়। তার প্রথম বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ছিল কৃষি উন্নয়নে। বঙ্গবন্ধু সেদিন কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা না দিলে কেউ কৃষিতে আগ্রহী হতো না। তার দূরদৃষ্টি সিদ্ধান্তেই মেধাবীরা কৃষির প্রতি আগ্রহী হয়েছেন।

প্রশ্ন : কৃষি খাতে এরই মধ্যে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এ খাতকে আরো এগিয়ে নিতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

উত্তর : গমের ফলন কমে গেছে, বিপরীতে ফার্স্টফুডের কারণে ফসলটির চাহিদাও বাড়ছে। এ কারণে গম আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে হাইব্রিড সবজির ও ভুট্টার বীজ আমদানি করতে হচ্ছে। এছাড়া কৃষির বড় চ্যালেঞ্জ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া। কৃষি জমির ভিন্ন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, কৃষিতে আধুনিক বিজ্ঞানে শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রশ্ন : কৃষি গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ যথেষ্ট কি না। কেআইবির পক্ষ থেকে গবেষণায় কী ভূমিকা রাখতে পারে?

উত্তর : গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি গবেষণায় যে বরাদ্দ দেয়, তা পর্যাপ্ত নয়। ইউজিসির বরাদ্দ দিয়ে চাহিদার ৩০-৪০ শতাংশ সম্পন্ন করা যায়। এ বরাদ্দ দিয়ে উন্নত গবেষণা খুব কঠিন। তবে আমাদের গবেষকরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড নিয়ে আসেন। কাজেই আমরা শুধু ইউসিজির ওপর নির্ভরশীল নই। সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কেআইবির বসার প্রয়োজন রয়েছে। দেশে নিজস্ব কোনো কীটনাশক কারখানা নেই। ফলে কৃষক অল্প মূল্যে কীটনাশক পায় না। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সরকারের উচিত ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসে কীভাবে দেশেই এ শিল্প তৈরি করা যায়, সে নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এসব বিষয়ে কেআইবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রশ্ন : দেশে বেশকিছু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন কৃষি গবেষণায় বরাদ্দ বেশি জরুরি, নাকি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বেশি জরুরি?

উত্তর : সরকার কৃষিবিষয়ক শিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছে বলেই নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একটা সময় সক্ষমতা হবে, তখন সরকার পর্যাপ্ত বাজেট দিতে পারবে। আগামী দিনে প্রচুর দক্ষ গ্র্যাজুয়েট দরকার হবে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে শিক্ষার মান না বাড়লে প্রয়োজনীয় বাজেট পাবেনা। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনার মান বৃদ্ধি করার একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে। তবে অবশ্যই গবেষণার ক্ষেত্রে আরো বেশি জোর দিতে হবে।

প্রশ্ন : বর্তমানে মেধাবী কৃষিবিদদের মাঝে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। এর কারণ কী বলে মনে করছেন?

উত্তর : কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্র নেই। এছাড়া বাইরের দেশে অনেক বেশি প্রণোদনা দেয়, ভালো বেতন দেয়। কাজেই এটা বন্ধ করা কঠিন হবে। তাছাড়া বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, চাইলেও বিপুলসংখ্যক মানুষের চাকরির জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে কৃষিপণ্য উৎপাদনের যতখানি সুযোগ-সম্ভাবনা রয়েছে, তার সবটুকু কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে কি না? সম্ভব না হলে কারণ কী?

উত্তর : আমরা চাইলেই সব ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব না। আমাদের অনেক উৎপাদন ঘাটতি আছে। একদিকে জমির পরিমাণ কমছে; অন্যদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে। প্রত্যেকটি দেশের মধ্যেই পরস্পরের আদান-প্রদানের সম্পর্ক থাকে। তার মানে তাদের প্রত্যেকেরই নির্ভরশীলতা আছে। সর্বোপরি সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা হওয়া একটা কঠিন ব্যাপার। প্রকৃতপক্ষে তা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রশ্ন : কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে সরকার কী পরিকল্পনা নিতে পারে? সেটি বাস্তবায়নে কৃষিবিদরা কীভাবে অবদান রাখতে পারেন?

উত্তর : এক্ষেত্রে সরকারকে অনূকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে এবং কৃষিযন্ত্রের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কছাড় দিতে হবে। দেশেই যদি তৈরি করা যায়, তাহলে কম দামে এসব পণ্য পাওয়া যাবে, যা দেশের জন্যই লাভজনক।

প্রশ্ন : কৃষিবিদ দিবসে সরকারের কাছে কৃষিবিদদের প্রত্যাশা কী হতে পারে?

উত্তর : গবেষণা খাতে আরো বেশি বরাদ্দ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। বরাদ্দ বলতে শুধু অর্থ নয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পদ সৃষ্টি, দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং সঠিক সময়ে পদোন্নতি। পদোন্নতি না পেলে স্বভাবতই গবেষকরা মনোনিবেশ করতে পারেন না।

প্রশ্ন : বর্তমানে কৃষিপণ্যের দাম বেশি হওয়ার পেছনে যেসব কারণ আছে, যেমন সিন্ডিকেট, যথাসময়ে ফসল বাজারে না আসা এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে কেআইবি থেকে কোনো ভূমিকা নেওয়া যেতে পারে কি না?

উত্তর : বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কেআইবির কাজ নয়। সরকারের নিজস্ব মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট আছে। আমরা চাই বাজার মনিটরিং আরো শক্তিশালী হোক এবং ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য পাক।

প্রশ্ন: কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ দেওয়ার একটা কথা চলছিল। এর অগ্রগতি কতদূর?

উত্তর : সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টার্নশিপ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা বাইরের দেশে আছে। সরকার নীতিমালা এবং বাজেট বরাদ্দ দিলে আমরা এটা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close