প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পাকিস্তানে জোট সরকার গঠনে কূটকৌশল

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টার পর গতকাল রবিবার দুপুরে মিলেছে পূর্ণাঙ্গ ফল। ভোটে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় আগেই নিশ্চিত হয়েছে জোট সরকার পাচ্ছে পাকিস্তান। তবে এখন জোট সরকার গঠনে দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা দেনদরবার, কূটকৌশল। ভোটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিতরা বেশি আসনে জিতলেও সবাই ভোট করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। সেক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের দৌড়ে এগিয়ে নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন। তারা এরই মধ্যে চেষ্টা চালাচ্ছে পিপিপিসহ ছোট কোনো দলকে জোটে টানার। পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনা ব্যর্থ হলে এমকিউএমণ্ডপি, জেইউআই-এফ ছাড়াও অন্য ছোট ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়েও সরকার গঠনের আলোচনা করছেন পিএমএল-এন নেতারা। এভাবে সরকার গঠন করতে পারলে শাহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী এবং নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী করার চিন্তা নওয়াজ শিবিরের। খবর ডন, জিওটিভি ও বিবিসির।

জাতীয় পরিষদের সরাসরি ভোটাভুটির ২৬৬ আসনের একটিতে ভোট স্থগিত এবং একটি ফল স্থগিতের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬৪ আসনে ফল ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এতে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের সবাই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাগারে থাকা ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে লড়েছেন।

পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৬৪ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০১ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) ৭৫ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যান্য দল পেয়েছে ১৭টি আসন। একক সরকার গঠনে প্রয়োজন ১৩৪ আসন। তবে কোনো দলই তা পায়নি।

ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিতরা সর্বাধিক আসনে জিতলেও তাদের পরিচয় স্বতন্ত্র। সেক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে এক নম্বরে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন। ভোটে দ্বিতীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।

সরকার গঠনের দৌড়ে এগিয়ে পিএমএল-এন : নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল দাবি করে নওয়াজ শিবির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, পিপিপিকে সঙ্গে নিয়ে আরো ছোট দুয়েকটি দল বা স্বতন্ত্র কয়েকজনকে ভিড়িয়ে জোট সরকার গঠনে। জোট বেঁধে সরকার গঠনের দৌড়ে এগিয়ে থাকা পিএমএল-এন নিজেদের ৭৫ আসন এবং ৫৪ আসন জেতা পিপিপিকে নিয়ে দুই দলের হয় মোট ১২৯ আসন।

এরই মধ্যে রবিবার পিএমএল-এন ঘোষণা দিয়েছে, তারা এমকিউএমণ্ডপি দলের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিয়েছে। দলটি পিএমএল-এনের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে।

নওয়াজের দল এক বিবৃতিতে দাবি করে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। এ নিয়ে এমকিউএমণ্ডপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দলটির নেতা খালিদ মাকবুল সিদ্দিকি, ফারুক সাত্তার, কামরান তেসোরি, মুস্তাফা কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজসহ দলটির নেতারা।

পিপিপি চায় প্রধানমন্ত্রী হবেন বিলাওয়াল : ইমরান খান পরবর্তী পাকিস্তানের সরকারে নওয়াজের দলের সঙ্গে থাকলেও বিলাওয়াল শিবিরের মুখে এখন নতুন সুর। পিএমএল-এনের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছেন তার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। পাশাপাশি চেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়। পিএমএল-এনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পিপিপি এ দাবি করে বলে জানিয়েছেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফ। জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে শুক্রবার রাতে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেন পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ জানিয়েছেন, পিএমএল-এনের সঙ্গে জোট গঠন করতে রাজি হয়েছে পিপিপি। তবে বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছে তারা। বিলাওয়ালের বাবা আসিফ আলী জারদারির দাবি অনুযায়ী, বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী করা হলে কেন্দ্রের পাশাপাশি পাঞ্জাবেও পিএমএল-এনকে সমর্থন দেবে পিপিপি। যদিও এ নিয়ে পিএমএল-এন কোনো জবাব দেয়নি এখনো।

পিটিআইকে সরকার গঠনের নির্দেশ ইমরান খানের : সর্বাধিক আসনে জেতার দাবি করে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলবন্দি ইমরান খান। শনিবার আদিয়ালা জেলে তার সঙ্গে দেখা করেছেন পিটিআইর আইনজীবী উমায়ের খান নিয়াজি। জেলের বাইরে আইনজীবী নিয়াজি সাংবাদিকদের জানান, ইমরান খান নির্দেশ দিয়েছেন দলকে সরকার গঠনের। কেন্দ্রীয় সরকার এবং খাইবার পাকতুনখোওয়া ও পাঞ্জাবে প্রাদেশিক সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইমরান। নিয়াজি আরো জানান, যেসব আসনে ভোট কারচুপি করে পিটিআইয়ের প্রার্থীদের হারানো হয়েছে, সেসব আসনে নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করার নির্দেশ দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে লাহোরে বিক্ষোভ করায় দলটির অসংখ্য নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close