অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

টাঙ্গাইল শাড়ির ভারতীয় জিআই স্বীকৃতি

সরকারি পর্যায়ে চেতনার অভাব আছে : দেবপ্রিয়

জিআই পণ্য সম্পর্কে সরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতার অভাব আছে বলে মনে করেন সেন্ট্রাল ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি : বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা হক ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট নাইমা জাহান তৃষা।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ড. দেবপ্রিয় বলেন, দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন, জেনেভা হাইকমিশন এবং বিষয়টি নিয়ে সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপ কোনো প্রচ্ছন্ন সমর্থন কি না, তা বলতে পারছি না। কারণ এটা প্রমাণ করার কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। তবে তাদের দুর্বলতা আছে কি না, সেটা আচরণ দিয়ে পরিমাপ করা যায়। সেই আচরণ থেকে যদি ন্যূনতম বলি, তাদের (সরকারি পর্যায়ে) চেতনার অভাব আছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে তারা যথেষ্ট পরিমাণে অবহিত না।

সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় উৎপাদিত টাঙ্গাইল শাড়িকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্কের পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা তৈরি হলে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক গত ৪ ফেব্রুয়ারি পাট অধিদপ্তর পরিদর্শনকালে বলেন, ভারত এটা কীভাবে করেছে, তা আমার জানা নেই। তবে আমাদের টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের থাকার বিষয়ে যা যা করা দরকার, আমরা তা করব।

আবার গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুস শহীদ সাংবাদিকদের জানান, আমাদের সত্তা কেউ নিতে পারবে না। যেটা হয়েছে, সেটা ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের অধিকার রাখার জন্য আপিল করব। এছাড়া গত ২ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এক সাক্ষাৎকারে জানান, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি বিষয়। টাঙ্গাইল জেলার সঙ্গে এর নাম জড়িয়ে আছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারত দাবি করেছে, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ তাদের পণ্য। এ নিয়ে আমাদের ব্যর্থতা কোথায়, তা খুঁজে বের করব। তারপর কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, চিন্তা করব। তবে টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে দাবি করার ইস্যুকে খুবই ছোট ইস্যু বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়াদিল্লির বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির এমন ত্বরিত মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি এটাকে ক্লি জার্ক রিয়েকশন (হাঁটু কাঁপলেও গলার স্বর কঠিন) হিসেবে অবহিত করে বলেন, ভারত এটা ২০২০ সালে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আবেদন করেছে। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বীকৃতি দেওয়ার ২ মাস আগে এটা প্রকাশ করা হয়। এ সময়ের মধ্যে কোনো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য। কিন্তু সে সময়ের মধ্যে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন, জেনেভায় হাইকমিশন কেউই বিষয়টি জানলেন না। এমনকি বাংলাদেশের ট্রেড বডিগুলোও এ সম্পর্কে কিছুই বলেনি। ফলে চূড়ান্তভাবে স্বীকৃতি পায় ভারত। কিন্তু যখন সোশ্যাল মিডিয়াসহ পত্রিকায় এটা নিয়ে লেখালেখি হলো, তখন সবার টনক নড়ল।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, জিআই পণ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সময়মতো কাজে নামেনি। এখন পর্যন্ত আমরা ২১টি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এর মধ্যে টাঙ্গাইল শাড়ির নাম আসেনি। এ সময় টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরিতে জড়িত কিছু তাঁতি ভারতে চলে যাওয়ার যে যুক্তি, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। কারণ টাঙ্গাইল শাড়ি উৎপাদনে জড়িত সবাই ভারত চলে যায়নি। আবার অনেক মুসলিম তাঁতিও এর সঙ্গে জড়িত। তারা এখনো উৎপাদন করছেন। এখন বাংলাদেশের রসগোল্লার কারিগর যদি মধ্যপ্রাচ্যে চলে যায়, তাহলে কি সেটা সেখানকার পণ্য হয়ে যাবে?

এখন বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল শাড়ি সহজেই বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এমন আশা সহজে করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরই মধ্যে ভারত জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় কিছুটা অ্যাডভানটেজ পাবে। তবে চূড়ান্তভাবে এটা আমরাই পাব, যদি আইনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। টাঙ্গাইল শাড়ি ছাড়াও মসলিন শাড়িকেও তারা জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে বলে এ সময় জানান তিনি।

তবে এ সময়ে বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের তাড়াহুড়া না করে বিচার-বিশ্লেষণ করে আইনি পদক্ষেপে যেতে হবে। বাংলাদেশি মিশনগুলোকে ওয়াইপো (ডব্লিউআইপিও) নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এছাড়া ভারতীয় আইনে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ৩ মাসের মধ্যে আবেদন করতে পারে, এ সুযোগ নেওয়া যেতে পারে। এজন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের (আইনবিদ, ব্যবসায়ীসহ) সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close