প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পাকিস্তানে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট

* পিটিআই স্বতন্ত্ররা ৯৯, সরকার গঠনে দরকার ১৩৪ * ২৫২ আসনের মধ্যে নওয়াজ ৭১, বিলাওয়াল ৫৩ * সম্পূর্ণ ফল ঘোষণার আগেই ইমরান খানের জামিন

পাকিস্তানের নির্বাচনে সরকার গঠন করার মতো প্রয়োজনীয় আসন পাবে না কোনো দলই। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী দেশটিতে গঠিত হচ্ছে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। ফলে অন্য দলের সমর্থন ছাড়া এককভাবে কোনো দলের পক্ষেই সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই।

এরই মধ্যে সরকার গঠন নিয়ে চলছে দলগুলোর মধ্যে নানা আলাপ-আলোচনা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বেশি আসন পেয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। দলটির একজন নেতার দাবি তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাদেরই সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো উচিত।

অন্যদিকে দলগতভাবে নিজেদের বৃহত্তম দল বলে দাবি করেন আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ। আসন সংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও নওয়াজ শরিফ বলছেন, তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগই (পিএমএল-এন) এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দল। এই কারণে তিনি অন্যদেরও তার সঙ্গে যোগ দিয়ে সরকার গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলি খান গতকাল শনিবার দাবি করেছেন, জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির উচিত পিটিআইকে সরকার গঠনের আহ্বান জানানো। খবর ডনের। পিটিআই প্রধান বলেন, আমরা সংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠন করব। শিগগিরই বাকি আসনগুলোর ফল ঘোষণা করতে হবে। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন গহর খান। গহর আলি খান বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলের প্রতি অনুগত। তারা স্বাধীন সরকার গঠন করবেন। তিনি আরো বলেন, প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পিটিআই আন্তঃদলীয় নির্বাচনের দিকে যাবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে করা সব মামলাই ভুয়া।

পাকিস্তানের নির্বাচনের সব আসনের ফল ঘোষণা হয়নি। এরই মধ্যে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ইমরান খানকে ১২ মামলায় জামিন দিয়েছেন ইসলামাবাদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী আদালত (এটিসি)। গতকাল শনিবার ইসলামাবাদ এটিসির বিচারক মালিক ইজাজ আসিফ এক শুনানি শেষে এ রায় দিয়েছেন। একই সঙ্গে তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতা শাহ মেহমুদ কুরেশিকেও ১৩ মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।

গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২৫২টি আসনের ফল জানা গেছে। সেখানে দেখা গেছে, ৯৯ আসনে জয়ী হয়েছেন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ৭১ আসন পেয়েছে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩ আসন।

এদিকে, নির্বাচনে জয় দাবি করে কর্মী-সমর্থকদের এই বিজয় উদযাপন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান খান। ইমরান খান তার ভেরিফাইড এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, শত দমন-পীড়ন চলা সত্ত্বেও তারা এই নির্বাচনে ‘ভূমিধস বিজয়’ অর্জন করেছেন। এজন্য তিনি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি সেখানে নওয়াজ শরিফকে একজন ‘দুর্বল নেতা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি নাগরিকরা তাকে চায় না। এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই একটা কানাঘুষা ছিল যে দিনশেষে জিতবেন নওয়াজ শরিফই। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে বলছিলেন যে শরিফের দিকে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সুনজর আছে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনাকে ছাপিয়ে পিটিআই সমর্থিতদের এমন সাফল্য তথা জয় অপ্রত্যাশিত।

পিটিআই প্রার্থীরা ‘ক্রিকেট ব্যাট’ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না- নির্বাচন কমিশনের এমন আইন জারি করায় এই প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হন। কারণ, দলীয় প্রতীক না থাকা মানে সেটি কোনো স্বীকৃত দল নয়। সেই নিরিখে, বর্তমানে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন হচ্ছে সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক দল।

অন্য দলের প্রার্থীদের তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নওয়াজ শরিফ বলেন, তিনি দেশকে কঠিন সময় থেকে বের করে আনতে পারবেন। পাকিস্তানে সরকার গঠন করার জন্য কোনো দলকে ন্যূনতম ১৩৪টি আসনে জয়লাভ করতে হবে। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলে কোনো দলই এককভাবে এত বিপুলসংখ্যক আসন পায়নি।

এদিকে, নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ভোটের সময় নির্বাচনী স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, অবাধ তথ্য প্রাপ্তির সুযোগের মতো মৌলিক মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার জন্য যুক্তরাজ্য পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে। এই নির্বাচনে সব দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, মার্কিন পরারাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার পাকিস্তানের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলার কথা এবং ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধের বিষয়েও বলেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close