নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রার্থিতা উন্মুক্ত না থাকলে দেশে গণতন্ত্র থাকত না

* সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে * আওয়ামী লীগ গণমানুষের ভেতর থেকে বেড়ে ওঠা * জনগণের ওপর আস্থা রেখে কাজ করতে হবে * মানুষই আমাদের সংগঠনের বড় শক্তি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নৌকা প্রতীক এবং দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখার কারণ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন বানচালের জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল। প্রার্থিতা উন্মুক্ত না থাকলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি গণতন্ত্রকে হরণ করা হত। গতকাল শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

বিশেষ এ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, মহানগর, জেলা-উপজেলা ও পৌরসভার নেতা, দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, সিটি ও পৌর মেয়র, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ বর্ধিত সভাকে জাতীয় নির্বাচনের পর মিলনমেলা বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একই সঙ্গে সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, আগামী উপজেলা নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য কমানোর বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে, কী দেখে তারা বলছে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। এটা তাদের বলতে হবে। সেটা বলছে না। কিন্তু তারা বলে যাচ্ছে, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিছু দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে এ ধরনের কথা বলা হয়। যে দেশই বলুক, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কীভাবে, কোথায় সমস্যা, তাদের বলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনো তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় খুনোখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ভোটার যেন না আসে, নির্বাচনটা যাতে অবাধ না হয়, নির্বাচনই যেন হতে না পারে, সেই চেষ্টা ছিল; যাতে নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় এ নির্বাচন অবাধ ?ও সুষ্ঠু হয়নি। কাজেই নিষেধাজ্ঞা দাও, ওইটা দাও। আমাদের যখন বলেছিল নিষেধাজ্ঞা দেবে, তখন আমিও বলেছিলাম, দরকার হলে আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব, আমরাও দিতে পারি। আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি বলেই বলেছিলাম।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মনকষাকষি, নানা রকম কিছু হয়েছে। যেটা হয়েছে, সেটা এখন ভুলে যেতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে। যদি কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেটা সমাধানের জন্য আমরা আছি, কেন্দ্রীয় কমিটি করবে।’

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচন যদি উন্মুক্ত না হতো, তাহলে শুধু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হতো। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার অর্জন নর্স্যাৎ হয়ে যেত।

শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল পকেট থেকে আওয়ামী লীগের নামে সংগঠন বের হয়নি। এ সংগঠন মাটি-মানুষের ভেতর থেকে বেড়ে উঠেছে। মানুষই এ সংগঠনের বড় শক্তি।

‘উপজেলা নির্বাচনও উন্মুক্ত’: উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা এখানে আছেন বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি, নির্বাচনে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’ কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পান, সেটার দিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে, ‘যে অর্থ আমরা ব্যয় করি, তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কাজেই এখন থেকে যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তাকে তত বেশি দাম দিতে হবে। আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর যারা একেবারে পারবে না, তাদের জন্য ছাড় আছে।’

‘মামলাগুলো যেন ঠিকমতো চলে’ : বিরোধী দলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে বিএনপি চুপিসারে আগুন দিত গাড়িতে, রেলে সব জায়গায়। এবার তারা প্রকাশ্যে দিয়েছে, আবার ছবি তুলেছে। তাদের গুরু লন্ডন থেকে বলে দিয়েছে যে ছবি পাঠাতে হবে। ফলে তারা যে আগুন দিচ্ছে, সেই ছবি আর সাক্ষ্যপ্রমাণটা পাওয়া যাচ্ছে। যে যে এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটেছে, এগুলো জোগাড় করে এসব বিষয়ে মামলাগুলো যেন ঠিকমতো চলে এবং জড়িতরা শাস্তিটা যেন পায়।’

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির নির্যাতনের মামলা এখনো রয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই মামলাগুলো যাতে যথাযথভাবে হয়, সাক্ষী যেন হয় এবং এই দুষ্কৃতকারীরা যেন যথাযথ শাস্তি পায়। ভবিষ্যতে যেন আর আগুন দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করার সাহস না পায়, সে ব্যবস্থাটাই আমাদের করতে হবে।’

জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতির অর্থ কোনো ভালো কাজে লাগে না; বরং তাদের সন্তানেরাই বিপদে পড়বে। এ বদনাম যেন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কেউ জয়ী হয়েছেন, কেউ পারেননি। কিন্তু কিছু ভোট তো পেয়েছেন। সেটি মাথায় রেখে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস যেন নষ্ট না হয়, সেটি আপনাদের চলনে বলনে প্রমাণ করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close