নিজস্ব প্রতিবেদক
একুশের প্রথম স্মরণিকা
একুশের প্রথম স্মরণিকা ‘ওরা প্রাণ দিল’। ভাষা সংগ্রামী ফজলুল করিম তার স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ ‘বায়ান্নর কারাগার’ গ্রন্থে জানিয়েছেন, স্মরণিকাটি প্রকাশের উদ্দেশ্য জানতে নাতিদীর্ঘ সম্পাদকীয়টির পুরোটাই উদ্ধারযোগ্য : ‘মাতৃভাষার জন্য যে ছাব্বিশজন প্রাণ দিল, আহত হলো একশ পঁচিশজন, তাদের রক্তই মূর্তিমান পরিচয় হয়ে রইল তাদের ভাষার। কী ছাত্র, কী রিকশাওয়ালা, কী চাষী, কী কেরানি সবাই এসে দাঁড়াল সেই রক্তের পাশে! ঢাকার বীরদের শুধু চোখে দেখবার জন্য পূর্বপাকিস্তানের গ্রামে গ্রামে হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হয়েছে। বীরদের আশীর্বাদ জানিয়েছে, মেয়েরা যুগ যুগের অন্ধকার পর্দা সরিয়ে কেঁদেছে পথের মাঝে দাঁড়িয়ে।
এখানে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে কোনো গভীর আলোচনা নেই, বাংলা ভাষার উৎপত্তি বা গতিপ্রকৃতি নিয়ে নতুন কোনো বিশ্লেষণও না। কোনো রাজনৈতিক জটিল তত্ত্বের মীমাংসা করতেও বসিনি। শুধু বলতে চাই, ভাইসব, আমরা তোমাদের কথা ভেবেছিলাম। তবু জানি, আমাদের অক্ষমতার গ্লানি ঘুচবে না কিছুতেই। তোমাদের নমস্কার।’
ওরা প্রাণ দিল-এর সম্পাদকের নাম সহকর্মী। প্রকাশক শিবব্রত সেন, বেণু প্রকাশনী, ২০ বি, বালিগঞ্জ স্টেশন রোড, কলিকাতা ১৯। ছেপেছে প্রিন্টার্স কংগ্রেস লি., ৩ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান স্ট্রিট, কলিকাতা ১। প্রচ্ছদপট এঁকেছেন গণ-আন্দোলনের অংশীদার জনৈক শিল্পী। প্রথম প্রকাশ, আশ্বিন ১৩৫৯। এই হলো ওরা প্রাণ দিল সম্পর্কে প্রকাশনাসংক্রান্ত তথ্য।
প্রমথ নন্দী সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। তিনি ঢাকার প্রখ্যাত ডাক্তার এম এন নন্দীর ছোট ভাই। তাদের আরেক ভাই ভবেশ নন্দী ছিলেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আমার দেশ-এর সম্পাদক। প্রমথ নন্দীর বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামে। বামপন্থি রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষকের চাকরি দেওয়া হয়নি। পরে তিনি আর সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। নিজ গ্রামের মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। আশির দশকে ভারতে চলে যান।
স্মরণিকাটির প্রকাশকাল হিসেবে উল্লেখ রয়েছে আশ্বিন ১৩৫৯। ইংরেজি তারিখের সঙ্গে মেলালে দাঁড়ায় সেপ্টেম্বর ১৯৫২ সাল। কবি-সম্পাদক-সংগঠক হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় একুশে ফেব্রুয়ারির প্রকাশকাল মার্চ ১৯৫৩। সন-তারিখের বিবেচনায় সে ক্ষেত্রে ‘ওরা প্রাণ দিল’ একুশের প্রথম স্মরণিকা।
"