কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

রাখাইনের দখল নিতে মরিয়া আরাকান আর্মি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য দখলে নিতে মরিয়া আরাকান আর্মি। এরই মধ্যে ওই রাজ্যের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বন্দর দখলে নিয়েছে তারা। মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাওয়াদ্দি সূত্রে জানা গেছে, আরকান আর্মি এরই মধ্যে দখলে নিয়েছে রাখাইন রাজ্যের মিয়ানবি শহর। আনন্দবাজার জানিয়েছে, মিয়ানমার সেনা এবং বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষের পর সীমান্তবর্তী সে দেশের ঘাঁটি তাউং পিও (বাম) দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু শহরের অদূরে কয়েকটি সীমান্ত চৌকি দখলের কথা বুধবার জানিয়েছে থাইল্যান্ডে নির্বাসিত গণতন্ত্রপন্থি সরকারের সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতী’।

গত জানুয়ারি থেকে এ অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে আরাকান আর্মি। তাদের দমাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী পিছু হটে। অনেকে আত্মসমর্পণ করে। আরাকান আর্মি এবার রাখাইনের মংডু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে আরাকান আর্মি পালেতোয়ার দখল নিয়েছে বলে জানা গেছে। পুকতাও ও সিটওয়ে অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি জোর লড়াই চলছে।

সূত্র জানায়, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের পালেতোয়া শহরটির দখলে নিয়েছে ক’দিন আগে। এটি মিয়ানমার-চীন সীমান্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সামরিক বিরুদ্ধে অন্তত বড় তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই আরাকান আর্মি।

আরাকান আর্মির ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ‘পালেতোয়া এলাকায় মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর আর একটি ক্যাম্পও অবশিষ্ট নেই। সবগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের পালেতোয়া অঞ্চলটি বাংলাদেশের খুব কাছে। দূরত্ব মাত্র ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার। ফলে যেকোনো সংঘর্ষের ছোঁয়া সহজে বাংলাদেশে এসে পড়ে। তদুপরি পালতোয়া অঞ্চলটি ঘিরে নানা কারণে ভারত ও চীনের সঙ্গে টানাপড়েন রয়েছে। এখানে ভারতের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। ভারতের অঞ্চলগুলোর সঙ্গে পালতোয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করতে সেখানে বিনিয়োগ করেছে ভারত। তবে পালতোয়ার যে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে গেছে তা নিয়ে এখনো কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। এমনকি মিয়ানমার সামরিক বাহিনীও পালতোয়ার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি।

পালতোয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কালাদান নদীর বন্দর। এটিও এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। আরাকান আর্মি এখন মিয়ানমারের কায়াকদো অঞ্চলটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এটি দখলে নিয়ে রাখাইন রাজ্যের অনেক অংশই তাদের হাতে চলে আসবে। বিশেষ করে সিতওয়ের নিয়ন্ত্রণ যদি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে এখানে আর সামরিক জান্তাদের কিছু করার থাকবে না। ফলে আরাকান আর্মি যাতে এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে সে জন্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনী বিমান ও হেলিকপ্টারযোগে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে আরাকান আর্মি একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে।

আরাকান আর্মি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত একটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী। ২০০৯ সালে গঠিত হয়। এরা মিয়ানমারের একটি জাতিগত সংখ্যালঘু। দলটি মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে রাখাইন রাজ্যের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা চায়। আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সংঘাত চলছে। বিশেষ করে ২০১৫ সাল থেকে এ সংঘর্ষ আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ সংঘর্ষ তীব্র হতে থাকে। ফলে এই অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য স্থানচ্যুতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সংঘর্ষের ফলে উভয় পক্ষেরই হতাহতের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। আরাকান আর্মি দলটি গেরিলা কৌশলের জন্য বেশ পরিচিত। উল্লেখযোগ্যভাবে নারীদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ চলছে। ল্যান্ডমাইন ব্যবহারসহ অনেক বিষয়ে তারা সিদ্ধহস্ত।

জানা গেছে, আরাকান আর্মির (এএ) নেতা হলেন মেজর জেনারেল তুন মায়াত নায়িং নামের এক ব্যক্তি। সামরিকভাবে প্রশিক্ষিত তুন ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আরাকান আর্মির প্রতিষ্ঠা করেন। নিজে বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ। তুন মায়াত নাইং রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।

সূত্র মতে, মিয়ানমারের অনেকগুলো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে তারা নিজেদের মতো করে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে আরাকান আর্মি। অপেক্ষাকৃত নতুন ও আধুনিক সমরাস্ত্রের দিক থেকে সবচেয়ে সুসজ্জিত এই বাহিনী। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা গত কয়েক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং এই সময়ে রাখাইন রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী চিন রাজ্যে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করতে সমর্থ হয়েছে। গত দুই বছর আগে তারা দাবি করেছিল, রাজ্যটির ৬০ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে। প্রকৃত অবস্থা যে আসলে কী তা এখনো অজানা। তারা আসলে কী করতে চাইছে এ বিয়য়েও স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close