ড. নাদিম মাহমুদ

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চৌর্যবৃত্তি জাতির বড় ধরনের মেধাশূন্যতা তৈরি করবে

যেকোনো দেশ গঠনে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে সেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা উপকরণের প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব আমরা সেই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে দেখতে পাই। তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে মূল ধরে প্রতিটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়ে আসছে।

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের বেশ আগ্রহ আমরা দেখতে পাচ্ছি। পত্রপত্রিকা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে একটি বড় ইতিবাচক দিক হলো, আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভালোমন্দ ভাবতে শুরু করেছি। ইন্টারনেটের সহায়তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা জানছি। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সন্তানরা কী ধরনের শিক্ষা পাচ্ছে, তা জানবার চেষ্টা করছে এখনকার অভিভাবকরা। ফলে শিক্ষা উপকরণ নিয়ে যতটা আলোচনা এখন হচ্ছে, তা অতীতের কোনো সময়ে হয়নি।

নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে গত বছর থেকে আলোচনা হচ্ছে। কপি-পেস্টের অভিযোগ গত বছর যখন উঠেছিল, তখন সংশ্লিষ্টরা দায় স্বীকার করে নিজেদের সংশোধনের সুযোগ নিয়েছিল। কিন্তু আমরা এখন কী দেখছি, সেই পুরোনো রোগটি ফের দেখতে পেলাম নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে। সেই একই কায়দায় চুরি করে বাচ্চাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা হচ্ছে। গাইড বই তুলে দাও, কোচিং সেন্টার বন্ধ করো কথাগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক বছর ধরে বলবার চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা যখন পাঠ্যপুস্তক লিখছে, সেখানে কোচিং সেন্টারের ম্যাটেরিয়ালস, ব্লগ সরাসরি ঢুকে পড়ছে।

আমরা কতটা অভাগা যে, ভিনদেশের কোচিং সেন্টারের বিষয়বস্তু চোখ বন্ধ করে বাংলানুবাদ করে আমাদের বাচ্চাদের মেধা বিকাশের দায়িত্ব নিয়ে ফেলছে। সেইসব তথ্য ভুল না সঠিক, তা জানার ক্ষমতাটুকু আমাদের পাঠ্যবই লেখকদের থাকছে না। এমনভাবে তড়িঘড়ি করে বই লিখেছে, যেখানে ডজন ডজন ভুলভাল তথ্য, অসামঞ্জস্যপূর্ণ বাক্য তাদের কিছু মনে হয়নি। যে বইটি কোটি কোটি বাচ্চা বছরের পর বছর ধরে পড়বে, সেই বই লেখা হয়েছে অবহেলা আর অবজ্ঞার মধ্য দিয়ে, যা সত্যিই বেদনাদায়ক। এভাবে একটি জাতি কখনোই এগিয়ে যেতে পারে না, এসব চৌর্যবৃত্তি আমাদের জাতির সামনে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করবে, যার গহ্বরে উষ্ঠাগত হবে আমাদের প্রাণ। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আমি পাঠ্যপুস্তকটি পর্যালোচনা করেছি। অসংগতি নিয়ে কথা বলেছি। এখন সিদ্ধান্ত সরকারের, তারা আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রক, সুতরাং তারাই সিদ্ধান্ত নিক, কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ।

লেখক : গবেষক ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close