নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত
অনুপ্রবেশ থেমেছে আতঙ্ক কাটেনি
* বিজিপির দ্রুত প্রত্যাবর্তন চায় বাংলাদেশ * টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নিষেধাজ্ঞা * বিজিপির ১০০ সদস্যকে টেকনাফে স্থানান্তর
বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের ভেতরে গতকাল বৃহস্পতিবার একাধিক জায়গায় বেলা ১১টায় কয়েক দফা গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। নতুন করে আর কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। সীমান্ত পরিস্থিতি এদিন ছিল স্বাভাবিক। তবে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে আগামীকাল শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যদের প্রত্যাবর্তন চায়। এজন্য সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক সেহেলি সাবরিন বলেন, আশা করা যাচ্ছে অতিদ্রুত তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। সেটা আকাশপথেই হোক বা সমুদ্রপথেই হোক, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত জরুরি। সেহেলি সাবরিন বলেন, বাংলাদেশের জনসাধারণ, সম্পদ বা সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে যেন হুমকির সম্মুখীন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকার ওপারে মিয়ানমারের তোতারদিয়ায় বেশ কয়েক রাউন্ড গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। মিয়ানমারে থাকা অনেকেই স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত অঞ্চলে বুধবার রাত থেকেই পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক, মানুষের মধ্যেও অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনেকে আস্তে আস্তে ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই খেত-খামারে কাজ করতে দেখা গেছে কাউকে কাউকে। অনেকে দোকানপাট খুলেছেন। বাজারে-হাটে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়, এখনো অনেক বাড়িঘর খালি পড়ে আছে। ফের সংঘাত শুরুর আশঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা।
বিবিসির সংবাদদাতা জানান, ঘুমধুমণ্ডতুমব্রু সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত প্রাচীরে আরাকান আর্মির সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থায় সীমান্তে পাহারা দিতে দেখা গেছে। সেখানে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর কোনো উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। তবে বিজিবি মহাপরিচালক বুধবার জানান, এখনো স্থানীয়দের সতর্ক করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত নতুন করে অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যায়নি। বিজিবির তথ্যমতে, বুধবার নতুন করে মিয়ানমার থেকে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপি ও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ ৬৪ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। গত চার দিনে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি, সেনাসদস্যসহ অন্যদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৮ জনে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাংলাদেশ সীমানার কাছে চলমান উত্তেজনার কারণে শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটের পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসনসহ সীমান্ত সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও জাহাজ মালিকদের এক সভা হয়। সেখান থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তা বিবেচনায় সীমান্ত লাগোয়া এ নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথ দিয়ে ১০টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে। ঘুমধুম সীমান্তে বৃহস্পতিবার একটি মর্টার শেল কুড়িয়ে পেয়েছে শিশুরা। ঘুমধুম ইউনিয়নের নয়াপাড়া বিলে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ১০০ মিটার দূরে মর্টার শেলটি পাওয়া যায়। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা সেটি তাদের হেফাজতে নেন।
অন্যদিকে মিয়ানমারের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১০০ সদস্যকে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য তুমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত সোমবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল সীমান্ত পেরিয়ে ১১১ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে এসে বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদের অস্ত্রমুক্ত করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজিবির গাড়িতে করে টেকনাফ উপজেলার উপকূলবর্তী হ্নীলা ইউনিয়নে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম।
"