নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৪

বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

পণ্য রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজুন

* হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য ঘোষণা * আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে * লক্ষ্য স্থির থাকলে যেকোনো অর্জন সম্ভব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানিতে ব্যবহৃত অর্থ ফেরত আনতে এবং আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে রপ্তানিকারকদের আরো সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের জরুরি ভিত্তিতে আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। আমাদের নতুন পণ্য, নতুন গন্তব্য এবং বিদেশি বাজারের সন্ধান করতে হবে। আমাদের বিশ্বব্যাপী একটি বা দুটি বাজারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। গতকাল রবিবার রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী হস্তশিল্পজাত পণ্যকে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবার নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি আয় বাড়াবো ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম কিন্তু আমাদের নতুন বাজার ধরতে হবে। লক্ষ্য স্থির থাকলে যেকোনো অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই। আমাদের বিশ্বব্যাপী একটি বা দুটি বাজারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়।

সরকারের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে এবং কোন অঞ্চলে কোন পণ্য ভালো হয় সেখানে সেই শিল্প গড়ে উঠবে। সেবা খাতেও আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং ভালো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই খাতে রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিশাল সুযোগ সামনে রয়ে গেছে। আইটি খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ২৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারছি। যদিও বিশ্ব মন্দার অভিঘাতে ইউরোপ আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও পণ্য চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে নতুন বাজার আমাদের খুঁজতে হবে, নতুন জায়গায় যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতি বছর একটা পণ্যকে বর্ষপণ্য হিসেবে সুনির্দিষ্ট করে দেই। পাট ও পাট জাত পণ্য, চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য এভাবে প্রতি বছরই বর্ষপণ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এবার আমি ঠিক করেছি ‘হস্তশিল্প পণ্যকে’ ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণার। কেন হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য করা হলো তার ব্যাখ্যায় সরকার প্রধান বলেন, এবারের যে বর্ষপণ্য অর্থাৎ ‘হস্তশিল্প পণ্য’ সেটা আমাদের নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আরো কৃতজ্ঞ এজন্য যে টানা চারবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। আমার কাছে ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়, আমার কাছে ক্ষমতা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটা সুযোগ। মানুষের কল্যাণে কাজ করার এবং মানুষকে সেবা দেওয়ার একটা সুযোগ। যেটা আমি আবারও পেয়েছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমাদের গ্রাজুয়েশন হয়েছে উন্নয়নশীল দেশে, ২০২৬ সাল থেকে তা কার্যকর হবে। কাজেই এই সময়টা আমাদের সরকারে আসাটাও মনে হয় খুব প্রয়োজন ছিল। কারণ ২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে যেসব সুযোগ আমরা পাব সে সুযোগগুলো আমাদের যেমন যথাযথভাবে ও সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে তেমনি যে চ্যালেঞ্জ আসবে সেগুলোও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।

স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।

অনুষ্ঠানে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় ও বিনিয়োগ আকর্ষণে গত ১৫ বছরে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং ইরানের কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। বিদেশি কোম্পানির ১৬-১৮টি প্যাভিলিয়নসহ ৩৫১টি স্টল রয়েছে। মেলা সকাল ১০টায় খোলা হবে এবং রাত ৯টায় বন্ধ হবে। সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে দর্শনার্থীরা রাত ১০টা পর্যন্ত মেলায় থাকতে পারবেন। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার্থে ফার্মগেট থেকে মেট্রোরেল এবং এলিভেট এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগের জন্য বাস পাওয়া যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close