নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

সূর্যের উঁকিতেও কমেনি শীত

১৬ জেলার তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রির নিচে * রংপুরে শিশু, ফুলপুরে কৃষকের মৃত্যু * হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে শিশুরোগী

সূর্য উঠলেও শীতের তীব্রতা কমেনি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শীতের তীব্রতার সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যাও বাড়ছে। হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে কয়েক গুণ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঠাণ্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। আর এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নবজাতক, শিশু ও বৃদ্ধরা।

ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বুধবার রংপুরে এক শিশু ও ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় এক কৃষকের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সারা দেশে ৩ হাজার ১০১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হয় ৮৯০ জন। ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি হয় ২ হাজার ২১১ জন।

রংপুর : ঘন কুয়াশার কারণে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না রংপুরে। সেই সঙ্গে দিন-রাতে একই রকম শীত অনুভূত হচ্ছে। গতকাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশুসহ সব ওয়ার্ড ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীতে পরিপূর্ণ দেখা গেছে। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে গড়ে ৮০ থেকে ২১৬ শিশু।

হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৮, ৯ ও ১০ নম্বর তিনটি শিশু ওয়ার্ডে ৮০ শয্যার বিপরীতে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভর্তি ছিল প্রায় ২১৬ শিশু। শয্যা সংকটের কারণে অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন এক-দুজন করে শিশু ও বয়স্ক রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমান সময়ে শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী জানান, শীত বেশি হলেও এখানে রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি। মৃত্যুর সংখ্যা স্বাভাবিক রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যেভাবে স্বাভাবিক মৃত্যুগুলো হয়, ঠিক সেভাবেই আজকে (বুধবার) একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

বগুড়া : চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার তাপমাত্রা বেড়ে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও শীতের তীব্রতা কমেনি। এতে জেলার দুটি সরকারি হাসপাতালেই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা শফিক আমিন কাজল জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশুরা চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে শিশু ও মেডিসিন বিভাগে ২০ জন ভর্তি থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৩২ জন হয়েছে।

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগী কিছুটা বেড়েছে। রোগ থেকে রক্ষায় গরম কাপড় পরিধান, খাবার ও গোসলের সময় গরম পানি মিশিয়ে ব্যবহার করার আহ্বান জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম।

মানিকগঞ্জ : ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে বহির্বিভাগে ঠাণ্ডাজনিত কারণে প্রতিদিন ৩০ জন শিশু ও ২০ জন পূর্ণবয়স্ক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা কাজী এ কে এম রাসেল এ তথ্য জানান। শীত যত বাড়ছে, রোগীর সংখ্যা তত বাড়ছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ঠাণ্ডাজনিত রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন, ভর্তি হচ্ছেন।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১২টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন করে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, ঠাণ্ডাজনিত হাসপাতালে আসা রোগীদের যাতে চিকিৎসার কোনো সমস্যা না হয় সেদিক দিয়ে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

মেহেরপুর : ২৫০ শয্যা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ২১৭ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৫ জন।

নওগাঁ : জেলার সদরের হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও জনবল ও সরকারি বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১০০ শয্যার। তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে ২৩২ জন। ঠাণ্ডাজনিত রোগে প্রতিদিন এ হাসপাতালে প্রায় ১২০-৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে দৈনিক ৭০০-৭৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।

গত এক সপ্তাহে প্রায় ৪৫০ জন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্য শিশু এবং নারীর সংখ্যাই বেশি।

এদিকে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতালে জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে হাসপাতাল ১২ জন মেডিকেল কর্মকর্তা ও ৫ জন কনসালটেন্টের কমতি রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও : জেলায় শুরুতে শীতের প্রকোপ কম থাকলেও গত ৬-৭ দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় জনজীবনে স্তবিরতা নেমে এসেছে। গতকাল সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঠাকুরগাঁও সদর জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৫০ হলেও বুধবার ৪৬১ জন রোগী ভর্তি ছিল। আর শিশু ওয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৪৫ শয্যা হলেও ১৪৬ জন রোগী ভর্তি আছে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা রকিবুল আলম চয়ন বলেন, শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও এখনো শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি। তবে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আগামীতে বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) : উপজেলার সাহাপুর গ্রামে জমিতে কাজ করতে গিয়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগে বুধবার এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে সারোয়ার আলম বোরো জমিতে কাজ করতে প্রচণ্ড শীতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। পরে ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রংপুর ব্যুরো, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও ও ময়মনসিংহের ফুলপুর প্রতিনিধি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close