নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

তীব্র শীতের মধ্যেই বৃষ্টির পূর্বাভাস

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড করা হয়। নিম্ন তাপমাত্রার কারণে সারা দেশে তীব্র শীত অনুভূতি হচ্ছে। সেইসঙ্গে ঘন কুয়াশা। এতে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বেশি বিপাকে। ঠাণ্ডায় শীতজনিত রোগের প্রকোপও বেড়ে গেছে। গতকাল সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধ ও বৃহস্পতিবার কোথাও কোথাও হালকা অথবা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে পারে। এতে শীত আরো বাড়বে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল সকালে পর্যবেক্ষণাগারে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পর্যবেক্ষণাগারে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর থেকে তাপমাত্রা আরো কমবে। চলতি মৌসুমে অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী তাপমাত্রা আরো নিচে নামতে পারে। শ্রীমঙ্গলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে।

এদিকে শীতজনিত রোগে প্রতিদিন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্কদের নিয়মিত ভর্তি অব্যাহত রয়েছে। গরম কাপড়ের দোকানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ভিড় প্রতিদিন বাড়ছে।

মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ধূমপানজনিত কিংবা মাটির চুলার কারণে যারা অসুস্থ তারাই এ সময় হাসপাতালগুলোতে বেশি ভর্তি হয়ে থাকেন। ঠান্ডাজনিত রোগের মধ্যে এটিও অন্যতম। তাই তাদের এ সময় আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা গড়ে ৮ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। গত পাঁচদিন পরে দুপুরে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও সোমবার রৌদের প্রখরতা ছিল না। তীব্র শীতে খেটে খাওয়া অনেক শ্রমিক কাজে যোগদান করতে পারছেন না। ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এছাড়া তীব্র ঠাণ্ডায় শীতজনিত রোগ বেড়েছে।

তেঁতুলিয়া ১ম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। জানুযায়ীজুড়েই শীতের তীব্রতা বজায় থাকতে পারে।

বান্দরবানে টানা কয়েক দিনের তীব্র শীতে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ১০০ শয্যার বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। বান্দরবান সদর হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছে অসংখ্য রোগী। এদের মধ্যে শিশুরোগ ছাড়াও মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনিসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের চিত্র একই।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ ইস্তিয়াকুর রহমান বলেন, ঠাণ্ডাজনিত কারণে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সামনে আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিছে। শীতের শিশুদের গরম কাপড় পরিধানসহ অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ায় পরামর্শ দেন তিনি।

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অসহায়-দুস্থরা গরম কাপ?ড়ের অভা?বে কষ্টে আছেন।?জেলায় সরকারিভাবে ৮ হাজার শীতবস্ত্র বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাক?লেও তা পৌঁছায়?নি। উলিপুর তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত। শীতে বি?শেষ করে নদ-নদী অববা?হিকার মানুষজন কা?হিল হ?য়ে প?ড়ে?ছেন।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, আমরা বিতরণ চলমান রে?খে?ছি, ত?বে কিছু চেয়ারম?্যান নেয়?নি এখনো। যা?তে প্রকৃত শীতার্তরা ব?ঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জে মাঘের কনকনে শীতে মানুষসহ গবাদি পশুরাও কাবু হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। গবাদি পশুগুলো চট-ছালা কিংবা পুরোনো কাপড় পরিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে মানুষ। সিরাজগঞ্জের গবাদি খামারি শহিদুল ইসলাম, মেছড়া চরের আজিজ ও মোকতেল জানান, গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। ঘাসসহ পশু খাদ্য সংগ্রহে হিমশিম খেতে হচ্ছে ।

সিরাজগঞ্জে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক জানান, এখন পর্যন্ত কোনো গবাদি পশুর কোনো রোগ দেখা যায়নি। তবে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। গবাদি খামারিদের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গবাদি পশুকে চট বা ছালা পরানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, বান্দরবান, কুড়িগ্রামের উলিপুর ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close