গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪

ঠাণ্ডাজনিত রোগী বাড়ছে সতর্ক থাকার পরামর্শ

সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাবে ওষুধ প্রয়োগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বলছেন, রোগের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের চিকিৎসাপত্র ছাড়া কোনো অবস্থায় প্রয়োগ করা যাবে না অ্যান্টিবায়োটিক। অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগের ফলে বেড়ে যেতে পারে মৃত্যুঝুঁকি। তবে ঠাণ্ডার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকায় নবজাতক থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব তিন বছর পর্যন্ত বছর শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। তাই কনকনে শীতে সর্দি-জ্বর ও নিউমোনিয়া থেকে শিশু ও বয়স্কদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে দৈনিক গোসল করা থেকে বিরত রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এরই মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগে উত্তরাঞ্চলে শিশু মৃত্যুর হার বেড়েছে। বিশেষ করে লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ঠাণ্ডাজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনিই বাড়ছে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব মৌসুমি রোগ থেকে বাঁচতে অভিভাবকদের সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ শফি আহমেদ মুয়াজ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্বাভাবিক শীতে আমাদের চেম্বার ও হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় কমে যায়। কিন্তু অস্বাভাবিক কিংবা তীব্র শীতের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে শিশু থেকে বয়স্কদের কিছুটা শাররিক সমস্যা দেখা দেয়। তখনই রোগীর চাপ বেড়ে যায়। এর মধ্যে সর্দি-জ্বর, কাশি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিস অন্যতম। তবে যাদের অ্যাজমা আছে তাদের এটা বেড়ে যায়। তখন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন ওই শ্রেণির রোগীরা। আর ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়। এর বাইরে চর্ম রোগে যারা ভোগেন এ সময়েই তাদের ঝুঁকি বাড়ে। মূলত শারীরিক সক্ষমতা (ইমুনিটি পাওয়ার) কম থাকার কারণে সেগুলোর উপসর্গ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সবই ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা।

তিনি বলেন, যদি কোনো শিশুর ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে সর্দি বা কাশি হয়, তাহলে তার নাক পরিষ্কার করে দেওয়া এবং কুসুম গরম পানি খাওয়ানো জরুরি। এ সময় অযথা অ্যান্টি-হিসটামিন বা অ্যান্টি-বায়োটিক জাতীয় ওষুধ সেবন করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।

বিশেষজ্ঞ এই শিশু চিকিৎসক বলেন, যদি প্রকৃত অর্থে জ্বর বা সর্দি-কাশি থাকে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হঠাৎ কিছু রোগী পাচ্ছি যার মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী। যতি বেশি ঠাণ্ডা পড়ে তাহলে সুরক্ষার জন্য বাইরে শিশুদের বের না করা ও শীত নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বলেন, বাসাতে গরম কাপড় পড়বে। বিশুদ্ধ পানি পান করবে। এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া ও পরিবারে অনুশীলন করা হলে ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সহজ হবে।

রাজধানী ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রুহিনা তাসমিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় শিশুরা এবং বয়োবৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হয়। প্রতি শীত মৌসুমেই এর প্রভাব আমরা দেখতে পাই। শিশু সুরক্ষার জন্য আমাদের সরকারি কিছু পদক্ষেপ রয়েছে, যেমন নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া। শিশুদের বয়সভেদে যে টিকাগুলো দেওয়া হয়, সেগুলো সযত্নে নিতে হবে। এছাড়া শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলে শিশুদের খুব সাবধানে রাখতে হবে। দুই থেকে তিন বছরের শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। এ বছর অস্বাভাবিক শীত তাই আরেকটু বড় বাচ্চাদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য গোসল করা থেকে বিরত রাখাই শ্রেয়। আবার যদি গোসল করানো হয়, অবশ্যই শিশুকে ভালোভাবে মুছিয়ে শুকাতে হবে। বলেন, শূন্য থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশু সুরক্ষায় মায়েদের উচিত বুকের দুধ খাওয়ানো, এটা বড় ধরনের প্রতিষেধক এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। আর যেসব শিশু বুকের দুধ পান করানো হয়, তাদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি অনেক কম।

নিউমোনিয়া ছাড়াও দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের আরেকটি রোগের ঝুঁকি থাকে উল্লেখ করে এই শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, সেটা হলো ব্রংকিউলাইটিস। এই রোগটি ভাইরাল কিন্তু অনেক সময় শিশু খেলাধুলা করায় বোঝার উপায় থাকে না সে কোনো রোগে আক্রান্ত। এতে তার শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। চিকিৎসার ভাষায় এটাকে বলা হয়, হাঁচি, কাশি ও বাঁশি। এ রোগে এমন কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। যেটা আমাদের ভুল করা হয়, এসব বাচ্চাদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, যা চরম ভুল সিদ্ধান্ত। এসব বিষয়ে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তবে নিউমোনিয়া হলে তীব্র জ্বর থাকে। সঙ্গে অসুস্থতার প্রকোপ বেশি থাকে। এখানেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুকে বাসায় না রেখে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। এই রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়, তাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দিতে হবে। বলেন, আরেকটি গ্রুপ আছেন ছোট, বড় সবাই যারা আগে থেকেই অ্যাজমা রোগী শীতের প্রকোপ বাড়লে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিটা বেশি থাকে। হাঁপানি রোগীও এ সময়ে কষ্ট বেশি হয় রোগটি বাড়ার কারণে। এ রোগীদের ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিতে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close