প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

ইয়েমেনে বিমান হামলা যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের

চরম প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি হুথিদের

ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ করে বিমান হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। গতকাল শুক্রবার মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হুথিদের লজিস্টিক্যাল হাব, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অস্ত্র সংরক্ষণের স্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে হুথিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে যে হামলা চালিয়ে আসছে, তার জবাবে সরাসরি ইয়েমেনে এ হামলা চালাল দেশ দুটি। হামলায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির কথা জানা গেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে নির্লজ্জ এ আগ্রাসনের জন্য ‘চরম মূল্য’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হুথিরা। যুক্তরাষ্ট্রকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। হামলার নিন্দা জানিয়েছে- ইরান, রাশিয়া, তুরস্ক ও জর্ডানসহ বেশ কয়েকটি দেশ। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।

রাজধানী সানার হুদাইদাহে লোহিত সাগরে হুথি বন্দর, ধামার ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ঘাঁটিসহ অন্তত ১৬টি স্থাপনায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুথিদের অস্ত্র ভাণ্ডার, কমান্ড সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের ব্যবহৃত সামরিক অবস্থান লক্ষ করেও বোমা হামলা করা হয়েছে। জাহাজ থেকে ছোড়া হয়েছে তোমাহোক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া হুথিদের প্রতিরোধে যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে জাহাজে ইরান-সমর্থিত হুথিদের হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও বাহরাইন এতে সহায়তা দিচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানিয়েছেন, রয়্যাল এয়ার ফোর্সের যুদ্ধবিমান হুথিদের সামরিক স্থাপনাগুলোয় হামলা চালাতে সহায়তা করেছে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধারা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলা চালায়।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, আনুমানিক ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ তাদের হামলার আওতায় ছিল। হুথিরা বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে এসব হামলা চালায়। যুক্তরাজ্যের বাহিনী হুথিদের ছোড়া ২১টি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করেছে। মার্কিন বাহিনী এটিকে ইরানসমর্থিত হুথিদের ‘জটিল হামলা’ বলে অভিহিত করেছে। অবশ্য এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। গত প্রায় ৫০ দিনে লোহিত সাগরে হুথিদের এটি ২৬তম হামলা বলে মার্কিন বাহিনী জানিয়েছে।

গত ১৯ নভেম্বর লোহিত সাগরে তুরস্ক থেকে ভারতে যাওয়ার পথে গ্যালাক্সি লিডার নামের একটি জাহাজ ছিনতাই করে হুথিরা। গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে সাগরে হামলা শুরু করেছে। হুথিরা বলেছে, ইসরায়েল গাজায় সংঘাত বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা তাদের হামলা চালিয়ে যাবে। হুথিরা ইয়েমেনের বেশির ভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে।

এরপরই যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুথিদের হামলা মোকাবিলা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক জোট গঠন করেছে। তাদের হামলা কিছু শিপিং লাইনকে দক্ষিণ আফ্রিকার চারপাশে দীর্ঘ সমুদ্রপথ বেছে নিতে এবং লোহিত সাগরকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে বাধ্য করেছে।

‘চরম মূল্য’ দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যকে: ইয়েমেনে বিমান হামলার জবাবে পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইয়েমেনে হুথিদের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-ইজি বলেন, এ হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে চরম মূল্য দিতে হবে। ইয়েমেনের টিভি চ্যানেল আল-মাসিরাহ তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এ ‘নির্লজ্জ আগ্রাসনের’ জন্য ‘চরম মূল্য’ দিতে হবে।

হুতি কর্মকর্তা আবদুল কাদের আল-মোর্তাদা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্স-এ জানিয়েছে, ইয়েমেনজুড়ে হামলা চালানো হয়েছে। রাজধানী সানা, হুদায়দাহ গভর্নরেট, সাদা ও ধামারে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। হুথিদের লোহিত সাগর বন্দরের শক্ত ঘাঁটি হুদায়দাতে হামলা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে সংযত থাকার আহ্বান সৌদির : ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বিমান হামলার পর হুথিদের হামলা-পাল্টা হামলার আশঙ্কায় লোহিত সাগর অঞ্চলের নিরাপত্তায় মধ্য প্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মিত্রদের সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে উত্তেজনা এড়াতে বলেছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, রিয়াদ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close